কুকুর ‘অপবিত্র’ আখ্যা দিয়ে হত্যা, কোরআনের আলোকে কতটা গ্রহণযোগ্য?
সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৮:৫০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি বাসভবনের আঙিনায় থাকা এক মা কুকুরের আটটি সদ্যজাত বাচ্চাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে ১ ডিসেম্বর ২০২৫, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটিকে অনেকেই সুস্পষ্ট প্রাণী নির্যাতন ও নৈতিক অবক্ষয়ের উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে তথাকথিত কিছু ব্যক্তি ধর্মীয় দৃষ্টিতে কুকুরকে ‘আপবিত্র প্রাণী’ আখ্যা দিয়ে এ ধরনের হত্যাকে পরোক্ষভাবে সমর্থনমূলক মন্তব্য করেছেন। আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদদের একাংশ বলছেন, কোরআন-হাদিসের প্রেক্ষাপট না বুঝে এমন মন্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং নির্মম আচরণকে ধর্মের আড়ালে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ইসলামি বিদ্বানদের ব্যাখ্যায় জানা যায়, পবিত্র কোরআনে কুকুর প্রসঙ্গটি দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে। প্রথমটি সূরা কাহফে, আসহাবে কাহফ নামের ঈমানদার যুবকদের গুহাবাসের ঘটনায়; সেখানে তাদের সঙ্গী কুকুরকে বারবার স্মরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেন যে, ওই কুকুরটি গুহার প্রবেশমুখে সামনের পা মেলে শুয়ে থাকে, যা আসহাবে কাহফের পাহারাদার ও সঙ্গী হিসেবে তার অবস্থানকে সম্মানজনকভাবে তুলে ধরে। মুফাসসিরদের মতে, কুকুর হয়েও সে নেককারদের সঙ্গ লাভ করে মর্যাদার সঙ্গে কোরআনের আলোচনায় স্থান পেয়েছে, যা প্রাণীটির অস্তিত্বকে নিছক ঘৃণার বিষয় না দেখিয়ে সৎ সঙ্গ ও আনুগত্যের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে হাজির করে।
দ্বিতীয় উল্লেখটি আছে সূরা আল-মায়েদায়, শিকারি কুকুরের মাধ্যমে ধরা শিকারকে হালাল ঘোষণা করার বিধানে। সেখানে আল্লাহ বলেন, মানুষের শিক্ষা দেওয়া শিকারি কুকুর বা শিকারি পাখি যদি আল্লাহর নাম নিয়ে শিকারে পাঠানো হয়, তবে তাদের ধরা শিকার নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে ভক্ষণযোগ্য। ফিকহ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আয়াত প্রমাণ করে যে কুকুরের প্রশিক্ষিত সেবা-কর্মকে কোরআন স্বীকৃতি দিয়েছে; সুতরাং প্রাণীটিকে সামগ্রিকভাবে ‘অপবিত্র’ বা ‘অবজ্ঞার যোগ্য’ ঘোষণা করে তার ওপর নির্যাতনের কোনো ধর্মীয় ভিত্তি নেই।
ধর্মীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, কুকুরের লালা বা শরীর-সংস্পর্শের ফিকহি বিধান থাকলেও তা কখনোই অকারণে প্রাণীটিকে নির্যাতন, হত্যা বা নির্মম আচরণের অনুমতি দেয় না। বরং কোরআন-হাদিসে মানুষের প্রতি যেমন দয়া, তেমনি প্রাণীর প্রতিও দয়া ও সহমর্মিতাকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে; আল্লাহর সৃষ্ট প্রাণীকে অযথা কষ্ট দেওয়া বড় ধরনের পাপ কাজ হিসেবে বিবেচিত। তারা মনে করেন, ঈশ্বরদীর এ ঘটনা শুধু আইনগত নয়, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধেরও চরম অবমাননা; কোরআনের আলোকে যেকোনো প্রাণী নির্যাতন বন্ধে সামাজিক ও আইনি উদ্যোগ জোরদারের দাবি তুলেছেন তারা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
২৬৪ বার পড়া হয়েছে