বান্দরবানে মাতৃমঙ্গলে পরিত্যক্ত গুদামে মিলল লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ
বৃহস্পতিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ৪:০৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বান্দরবান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (মাতৃমঙ্গল) একটি পরিত্যক্ত গুদামে সরকারি সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মজুদ থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না দেওয়ার কারণে এসব মূল্যবান ওষুধ অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মচারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাতৃমঙ্গলের গাড়ির গ্যারেজের পাশের একটি অচল সিঁড়িঘরকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানে লাখ টাকার বেশি মূল্যের বিভিন্ন ওষুধ ফেলে রাখা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে নামিদামি ব্র্যান্ডের এডি সিরিঞ্জ, ইসিপি ২ ট্যাব, সুখী ওরাল পিল, এমক্সিলিন, টাইসিল, প্যারাসিটামলসহ মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির জন্য বরাদ্দকৃত নানা ধরনের ওষুধ।
অভিযোগ উঠেছে, রোগীদের মাঝে সময়মতো বিতরণ না করায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকতে থাকতে ওষুধগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি, এটি স্বাস্থ্যসেবার চরম অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। দরিদ্র রোগীদের জন্য বরাদ্দ এসব ওষুধ নষ্ট হওয়ায় সরকারি টাকার অপচয় হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
মাতৃমঙ্গলে চিকিৎসা নিতে আসা রোজিনা ও সখিনা বেগমসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, বহুবার ওষুধ চাইতে গেলে কর্তৃপক্ষ ‘ওষুধ নেই’ বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করেন, ওষুধগুলো নাকি বিক্রির উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আর সেগুলো বিক্রি করার সাহস পায়নি সংশ্লিষ্টরা। ফলে সময়মতো ব্যবহার না হওয়ায় ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. কামরুল মনির রিবন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, 'সরবরাহের সময়ই বেশ কিছু ওষুধের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে ছিল। মেয়াদ কম থাকায় রোগীদের নিয়মিত বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এতে আমাদের কোনো অবহেলা নেই।'
এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক ডা.লেনিন তালুকদার জানান, বিভিন্ন দিবসের জন্য বাড়তি ওষুধ দেওয়া হয় বলে মাঝে মাঝে ওষুধ অব্যবহৃত থেকে যায়। আবার কখনো বিতরণের আগেই কিছু ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, যা বাতিল করতে হয়। তিনি বলেন, 'ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকেই কখনো কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আসে, আর অভিযোগের দায় এসে পড়ে আমাদের ওপর।'
তিনি আরও জানান, গুদামে থাকা ওষুধগুলো যাচাই করে নিয়ম অনুযায়ী ধ্বংস করা হবে।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ গুদামে রেখে দেওয়ার দায় কার-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
১১০ বার পড়া হয়েছে