সড়কে অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের দাপট, ব্যর্থ হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ২:২৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সড়কে চলাচল করা অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হলেও সফলতা আসেনি সরকারের।
বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যেমন এই ইস্যুতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও উচ্ছেদ অভিযানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এর ফলে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির ঘটনা।
সরকারি ভাষ্যমতে, দেশে ‘নছিমন’, ‘করিমন’, ‘ভটভটি’, ইজিবাইক এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার মতো তিন চাকার যানবাহন অবৈধ। একইভাবে ২০ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও মিনিবাসকেও বিবেচনা করা হয় মেয়াদোত্তীর্ণ বা অযোগ্য। এসব যানবাহনের একটি বড় অংশই এখনো দেশের সড়কে সক্রিয়ভাবে চলাচল করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত বৈধ যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৬৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে গণপরিবহন (বাস-মিনিবাস) মাত্র ২ শতাংশেরও কম। এই যানবাহনের প্রায় ৪৬ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ।
অন্যদিকে সরকারের অনুমান অনুযায়ী, সড়কে অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ২০ লাখ রাজধানী ঢাকায় এবং বাকি ৫০ লাখ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলাচল করছে।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৭৪১ জন। এর মধ্যে ২১ শতাংশের মতো নিহত হয়েছেন তিন চাকার ছোট যানবাহনের আরোহী।
বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২৯৪ জন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৩৫.৭৭%) ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৩.৬১%) ছিলেন তিন চাকার যানবাহনের যাত্রী।
তিন চাকার অবৈধ যানবাহন উচ্ছেদে বরাবরই সোচ্চার বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তবে তাদের অনেকেই লক্কড়ঝক্কড় বাস ও ট্রাক সরানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করেন না। সরকার অভিযান চালাতে গেলে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য করেন তারা।
চলতি বছরের মে মাসে পুরোনো যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা শেষ হলেও মালিকরা তেমন সাড়া দেননি। জুলাই মাসে রাজধানীতে অভিযান শুরু হলে পরিবহন শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। ওই সময় ৫১টি পুরোনো বাস ও ট্রাক জব্দ করা হলেও পরে অভিযান কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
বিআরটিএ জানায়, এখন পর্যন্ত ব্যাটারি বা ইঞ্জিনচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার এসব যানবাহনের কোনো নিবন্ধন পদ্ধতি নেই। নেই কোনো কাঠামোগত মানদণ্ড বা কারিগরি পরীক্ষা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদীউজ্জামান বলেন, “এই যানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও হঠাৎ করে বন্ধ করা সম্ভব নয়। বরং নীতিমালার আওতায় এনে এগুলোর কারিগরি মান উন্নয়ন করা যেতে পারে।”
অন্তর্বর্তী সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে নতুন যান নামাতে পরিবহন মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে চায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পুরোনো বাস আমদানির অনুমতি থাকলেও মালিকেরা তা ১২ বছরে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন। সরকার তা ৭ বছরে বাড়ানোর চিন্তা করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল হক বলেন, “পুরোনো বাস-ট্রাক উচ্ছেদে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া হঠাৎ উচ্ছেদ করলে সংকট তৈরি হবে। তাই ঋণ সহায়তা ছাড়া তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
১১৭ বার পড়া হয়েছে