মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় দ্বিগুণ, বিকল্প ভাবনায় সরকার

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৪:১৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর দুটি নতুন মেট্রোরেল প্রকল্প—এমআরটি লাইন-১ ও লাইন-৫ (নর্দার্ন রুট)—নিয়ে চূড়ান্ত নির্মাণ প্রস্তাবনার ব্যয় সরকারের পূর্বানুমানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাপানি ঠিকাদারদের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এই দুই প্রকল্পে ব্যয় হতে পারে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এতে চিন্তায় পড়েছে সরকার, শুরু হয়েছে বিকল্প ভাবনা।
জাইকার সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পগুলোর ব্যয় যৌক্তিক করতে সম্প্রতি জাপান সফর করে এসেছে একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল। দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সফরে জাইকা ও জাপান সরকারের সঙ্গে ব্যয় হ্রাসে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার এখন প্রকল্প খরচ যৌক্তিক করতে নতুন একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে।
২০১৯ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে দুটি প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-১-এর জন্য বরাদ্দ ছিল ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি এবং লাইন-৫-এর জন্য ৪১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি পাওয়া ঠিকাদারি প্রস্তাবনায় এই ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে—প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এমআরটি লাইন-১-এর প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে। একই চিত্র লাইন-৫-এর ক্ষেত্রেও, যার দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এই লাইনেরও বেশিরভাগ অংশ হবে পাতালপথে।
ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সরকার এখন বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “ডলার-টাকার মানের পার্থক্য বিবেচনায় ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এটি যে হারে বেড়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই জাইকাকে যৌক্তিক ব্যয়ের একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে। তারা রাজি না হলে, দরপত্রের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।”
সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “এমন উচ্চমূল্যে মেট্রোরেল নির্মাণ করা সম্ভব নয়—জাইকাকে সেটা স্পষ্ট জানানো হয়েছে।”
সরকার এখন জাইকার প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য বিশেষ একটি কমিটি গঠন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার সহকারী শেখ মইনউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে থাকছেন ডিএমটিসিএল-এর এমডি ফারুক আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা আন্তর্জাতিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক ব্যয় কাঠামো তৈরি করবে এবং সেটি জাইকাকে উপস্থাপন করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিকভাবে মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয়ের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের ব্যয় অনেক বেশি। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, আগের প্রকল্পগুলোর দর কষাকষির সময় সরকারি কর্মকর্তারা দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ঢাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা থেকে কমলাপুর) এর কাজ প্রায় শেষের পথে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এমআরটি লাইন-১ ও লাইন-৫ (নর্দার্ন রুট)।
১২২ বার পড়া হয়েছে