ভূমি অফিসে ভুয়া সনদে ৩৮ বছর ধরে চাকরি, পদোন্নতিতেও শীর্ষে

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৯:২১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে ভুয়া সনদ ব্যবহার,
বয়স জালিয়াতি, অবৈধভাবে পদোন্নতি গ্রহণ এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এই সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ দাখিল করেছেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক শেখ। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি দুদক চেয়ারম্যান, ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগে বলা হয়, আলীমুজ্জামান ১৯৮৭ সালের ২৫ নভেম্বর অষ্টম শ্রেণি পাসের ভুয়া সনদের মাধ্যমে তৎকালীন তহশীল অফিসে পিওন পদে চাকরিতে যোগ দেন। সনদ অনুযায়ী, তার জন্ম তারিখ ছিল ২৫ নভেম্বর ১৯৬৮, অর্থাৎ চাকরিতে যোগদানের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর ৫ মাস—যা সরকারি চাকরির নির্ধারিত বয়স (১৮ বছর)-এর চেয়ে অনেক কম।
পরে ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাশের আরেকটি সনদে জন্ম তারিখ দেখানো হয় ১৪ জুন ১৯৭৩, যা আগের সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই সনদ অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর, অথচ বাস্তবে তার বয়স ছিল ২১ বছর—যা এসএসসির জন্য অস্বাভাবিক ও বিধিবহির্ভূত।
এছাড়া, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের এক তদন্তে এ অনিয়ম ধরা পড়লে তাঁর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করা হয় (মামলা নম্বর: ০৪/২০০৪)।
তবে শুধু জাল সনদ নয়, তার বিরুদ্ধে সরকারি সুবিধা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খানখানাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সরকারি বাসভবনে পরিবারসহ বসবাস করলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাড়িভাড়া ভাতা গ্রহণ করে আসছেন। যা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর ১৪(২) ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অনিয়ম।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি বর্তমানে ৩০ জনের মধ্যে পদোন্নতির গ্রেডেশন তালিকার শীর্ষে রয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. আলীমুজ্জামান বলেন,
"আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারবো না। বিষয়টি ইউএনও স্যারের তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে, আমি শাস্তি মাথা পেতে নেব।"
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পায়রা চৌধুরী জানান,
"আমি এই অভিযোগ সম্পর্কে আগে কিছু জানতাম না। প্রথমবার সাংবাদিকের মাধ্যমেই বিষয়টি শুনলাম।"
অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক শেখ বলেন,
"ভুয়া সনদের মাধ্যমে ৩৮ বছর ধরে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করেন, আর এখনো পদোন্নতির শীর্ষে থাকেন, সেটা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য বড় হুমকি। আমি সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।"
১২২ বার পড়া হয়েছে