জলমহালের ইজারা প্রকৃত জেলেদের হাতে দিতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় নীতি সংলাপে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জলমহালের ইজারা সেইসব মানুষের হাতে দিতে হবে যারা এই পেশার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সময় জলমহাল স্থানীয় মানুষের নামে হলেও প্রকৃত ইজারা অন্যরা নেয়। তাই জৈবভিত্তিক পদ্ধতিতে জলমহালের ইজারা দিতে হবে, যাতে প্রকৃত জেলেরা সুবিধা পায়। বাওড়ে ইজারা ইতোমধ্যে জেলেদের দেওয়া শুরু হয়েছে এবং হাওরের ক্ষেত্রেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে প্রকৃত জেলেরা জলমহাল পেতে পারে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ’-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ফরিদা আখতার। সংলাপটি আয়োজন করে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) নামের একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
তিনি পরিবারে পুরুষ জেলেদের পাশাপাশি নারী জেলেদেরও মৎস্যজীবী কার্ড প্রদানের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। বর্তমানে জেলেদের মধ্যে মাত্র চার শতাংশই নারী, যা অত্যন্ত কম। যেহেতু জেলেদের অধিকাংশ পরিবারই পুরো পরিবার মিলিয়ে কাজ করে এবং নারীরা অধিকাংশ সময়ই বেশি শ্রম দেন, তাই তাদেরকেও সমানভাবে স্বীকৃতি ও সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, নারীদের এখনও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন, তেমনি নারী জেলেদের ব্যাপারেও যথেষ্ট কাজ বাকি রয়েছে।
ফরিদা আখতার বলেন, জেলে সম্প্রদায়ের আইনি জটিলতাও সমাধান করা দরকার। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক সময় জেলেরা ঝড়-তুফানে নিখোঁজ হয়ে যান, তখন তাদের পরিবার ব্যাংক লোন উঠাতে পারে না, বিধবা ভাতা পায় না। এই ধরনের সমস্যাগুলো মৎস্য আইনের খসড়া সংস্করণে ২০২৫ সালে সমাধানের জন্য কাজ চলছে।
তিনি আরও জানান, পুরাতন তালিকা থেকে অমৎস্যজীবীদের মৎস্যজীবী কার্ড বাতিল করা হয়েছে এবং এখন প্রকৃত জেলেদের কার্ড প্রদান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। জেলেদের পরিবারেও নারীদের কার্ড নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ হওয়ায় এগুলোকে বন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ থেকে বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরা বন্ধ করতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে, মাছ ধরা নিষিদ্ধকালে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে যাদের সহযোগিতা দেওয়া দরকার, তা পুরোপুরি দেয়া সম্ভব হয় না, যা বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
সংলাপে বিশেষ অতিথি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম মজুরি পান। জলমহাল ইজারা বর্তমানে রাজস্বভিত্তিক হওয়ায় তা বাতিল করে প্রকৃত জেলের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি যাচাইয়ের মাধ্যমে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার নারী।
অনুষ্ঠানে সিএনআরএস পরিচালক ড. এম আনিসুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম ‘এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ)’ প্রকল্পের পরিচিতি তুলে ধরেন।
সংলাপে ড. এম আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী রিসার্চ টিম লিডার আহমেদ আবিদুর রেজা খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনায় নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন এবং টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ ও উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
১৪৮ বার পড়া হয়েছে