জনমনে বিভ্রান্তি: ১২০ টাকায় ব্রাজিলিয়ান গরুর মাংস কি সম্ভব?

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ২:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
২০ আগস্ট ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে মতবিনিময় সভায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস পেরেজ দাবি করেন, বাংলাদেশ চাইলে মাত্র ১২০-১২৫ টাকা কেজি দরে আন্তর্জাতিক মানের হালাল গরুর মাংস আমদানি করতে পারবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, তার দেশ বহু দিন ধরে বাংলাদেশে সুলভ মূল্যে মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়ে আসছে, কিন্তু আগের সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হলে ব্রাজিলের বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ ও উৎপাদন সহযোগিতায় আগ্রহী হবে এবং মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনেরও আগ্রহ আছে। এই সভায় তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে প্রাণীজ আমিষ ও দুধ উৎপাদন উন্নয়নেও ব্রাজিল অংশীদার হতে চায়।
তবে রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর। কারণ ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বাজারে ২০২৫ সালে গরুর মাংসের খুচরা দাম প্রতি কেজি ২.০৫ থেকে ৩.১২ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২৩৫-৩৬০ টাকা। পাইকারি দরে প্রতি কেজি ১.৪৩-২.১৮ ডলার (১৬৫-২৫০ টাকা) এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চীনে ব্রাজিলের রপ্তানি মূল্য ৫.৫৫ ডলার (৬৩৮ টাকা), সৌদি আরবে ৫-৬ ডলার (৫৭৫-৬৯০ টাকা)। এমনকি এটি ব্রাজিলের জাতীয় গড় রপ্তানি দরের (৪-৬ ডলার) সঙ্গে তুলনা করলেও বাংলাদেশের জন্য ১ ডলারে গরুর মাংস পাওয়া দুরাশা ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি ব্যয়, পরিবহন, ট্যাক্স, শুল্ক যুক্ত করলে মূল্যের বাস্তব পরিমাণ ৩৫০-৫০০ টাকার নিচে হয় না। এতে স্পষ্ট, রাষ্ট্রদূতের এই কথা সচেতনভাবে অতিমাত্রায় বাড়িয়ে বলা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি এক ধরনের ‘তামাশা’ ছাড়া আর কিছু নয়, যা বিভ্রান্তি ছাড়া বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
তিনি আরও অগ্রসর কৃষি ও শিল্পখাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ব্রাজিলের বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহী এবং যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন বাড়াতে চায়। প্রাণিসম্পদ উৎপাদন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারেও তিনি অংশীদারত্বের প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি স্থানান্তর ও জনবল প্রশিক্ষণ, কৃষিখাদ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা, এবং ব্যবসা-বাণিজ্যিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্রাজিল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও আলোচনা করেন রাষ্ট্রদূত। এসব প্রস্তাবের লক্ষ্য, দুই দেশের মধ্যে কৃষি, খাদ্যগুদাম ও শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের বাজার নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করা।
১৩৭ বার পড়া হয়েছে