সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক

সিরিয়াকে ভাঙার পেছনে ইসরায়েলের পরিকল্পনা, জড়িত যুক্তরাষ্ট্রও

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২৫ ৮:২২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
সিরিয়াকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করার একটি সংগঠিত প্রকল্পে ইসরায়েল সরাসরি অর্থ ও তত্ত্বাবধান দিচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও কম নয়—এমনটাই দাবি করেছে অনুসন্ধানী গণমাধ্যম দ্য ক্রেডল।

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্প মূলত সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলকে কেন্দ্র করে হলেও এর প্রভাব বিস্তার করছে লেবানন পর্যন্ত। মার্কিন সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির ১৩ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে সিনেটর জেমস রিশ বলেন, "সিরিয়ার মানচিত্র যেন এক সমতল রুবিক্স কিউব—বিভিন্ন অঞ্চলের বিভাজন স্পষ্ট। আমরা মূলত পশ্চিম অংশ নিয়েই কথা বলছি।" এই মন্তব্যটি আসে সিরিয়ার আলভী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির পরিচালক মাইকেল সিং শুনানিতে আরও বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে সরকারের সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলা সম্ভব এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা যেতে পারে। এখন সেই ধারণাগুলিই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এক সমন্বিত সামরিক ও রাজনৈতিক অভিযানে, যার নেতৃত্বে রয়েছে ইসরায়েল।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য—সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি। এ পরিকল্পনার আওতায় লেবাননের উপকূলীয় অঞ্চলে সিরীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী মোতায়েন এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আক্রমণও অন্তর্ভুক্ত। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরা ও ক্যাপ্টেন রবার্ট, আর অর্থায়নে রয়েছে উগ্রপন্থী ইসরায়েলি সরকার।

যদিও গণমাধ্যমে এই উদ্যোগকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার নামে উপস্থাপন করা হচ্ছে, বিশ্লেষকরা বলছেন প্রকৃত লক্ষ্য হলো চার্চ ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানো এবং ইসরায়েলি হস্তক্ষেপের পথ সুগম করা।

সম্প্রতি সিরিয়ার তারতুসে মার এলিয়াস ম্যারোনাইট চার্চে হামলার পরিকল্পনায় জড়িত একটি সেল গ্রেপ্তার করেছে সিরিয়ার নিরাপত্তাবাহিনী। পাশাপাশি, তথাকথিত 'ক্রিশ্চিয়ান মিলিটারি কাউন্সিল' গঠনের খবর এলেও এর অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি।

এদিকে, মার্কিন কৌশলগত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টাইগার হিল পার্টনার্স জানিয়েছে, তারা 'ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট অব ওয়েস্টার্ন সিরিয়া'র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ ডলারের এক বছরের চুক্তিতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ হয়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সমন্বয় করবে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া জুলাইয়ের শেষে 'ম্যান অব লাইট—সারায়া আল-জাওয়াদ' নামে এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটে, যারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে কাতার ও তুরস্কের নেতাদের সমালোচনা করে এবং কিছু ইসরায়েলি সাংবাদিক ও প্রবাসী সংখ্যালঘু নেতাদের ধন্যবাদ জানায়।

গভীরতর ইঙ্গিত মিলেছে যে, তেল আভিভে আলভী-দ্রুজ নির্বাসিত নেতাদের সঙ্গে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য নতুন জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে জানা যায়, ২,৫০০ বিদেশি যোদ্ধা সিরিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

তবে এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিরোধও দৃশ্যমান। ইতিমধ্যেই দামেস্ক ও সাফিতার মতো স্থানে হামলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে।

এক আঞ্চলিক নিরাপত্তা সূত্র দ্য ক্রেডলকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্য হলো সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে সিরিয়াকে বিভক্ত করা এবং দুটি কৌশলগত করিডর তৈরি করা—একটি সুয়েইদা থেকে হাসাকা পর্যন্ত, আরেকটি উপকূল থেকে আফ্রিন পর্যন্ত।

'পশ্চিম সিরিয়া' প্রকল্পটি গোপনে চলবে নাকি প্রকাশ্যে রূপ নেবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটি এখন আর কল্পনা নয়, বরং বাস্তবতা—সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে এক বহুমুখী আগ্রাসনের সূচনা।

২৫৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন