গুম ও শহীদ শিশুদের পুনর্বাসন না হলে সংস্কার অর্থহীন: মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
'অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম যদি জনগণের প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ হয়, যদি গুমের শিকার পরিবারগুলোর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়তা না করে, তাহলে সে সংস্কারের কোনো মূল্য নেই'— রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ মাঠে ‘গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় শিশু’ শীর্ষক আয়োজনে বক্তব্য রাখেন তিনি। বিএনপি পরিবারের সহযোগিতায় ও ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্তান এবং জুলাই মাসে সংঘটিত গণ–আন্দোলনে শহীদ শিশুদের স্মরণে এ আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করবে। দুঃখজনকভাবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।” তিনি বলেন, এই শিশুদের জীবনযাত্রায় যে মানসিক চাপ ও সামাজিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তির জন্য রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে।
গঠিত গুম কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “শোনা যাচ্ছে, কমিশন একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবভিত্তিক অনুসন্ধান ও পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যত অগ্রগতি নেই।”
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ব্যক্তিগত কষ্ট ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। বলেন, “যখন শুনি, শিশুটি বলতে চায়— ‘আমি আমার বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চাই’, তখন আবেগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়।”
বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারলে, আমাদের নেতা তারেক রহমান গুমের শিকার পরিবার ও শিশুদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গুম হওয়া বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শিশুদের বাইরে রাখা হলেও ফ্যাসিবাদী শাসনকালে এসব শিশুদের মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
জুলাই গণ–আন্দোলনে শহীদ শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন জানান, “জুলাই-আগস্টে ১৪১ শিশু মারা গেছে। সরকার তাদের জন্য কিছু করেনি।”
গুম হওয়া ব্যক্তি নুর হোসেনের মেয়ে নাবিলা নুর বলেন, “আমার বাবা শুধু বিএনপি করতেন বলেই গুম হয়েছেন। আন্দোলন চলছে, এখনও শেষ হয়নি।”
কায়সার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার বলেন, “১২ বছর ধরে বাবার কোনো খোঁজ নেই। সেদিন তিনি একটু পানি চেয়েছিলেন, সেটাও দেওয়া হয়নি।”
‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সংগঠক সানজিদা ইসলাম বলেন, “হাসিনার ফ্যাসিজম বহু পরিবার ধ্বংস করেছে। যারা বাবা-মা হারিয়েছে, আমরা সবাই একই বেদনার অংশীদার।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান। অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানসহ গুমের শিকার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও।
১১২ বার পড়া হয়েছে