কুষ্টিয়ায় অস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গ্রেফতার

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫ ৭:১৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটার পর ভারতের মাটি থেকে দেশে ফেরেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মূল লক্ষ্য ছিল রাজধানী ঢাকায় আবারও তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও পুরোনো সন্ত্রাসী বাহিনী পুনর্গঠন। এই উদ্দেশ্যেই তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ত্র সংগ্রহে মনোনিবেশ করেন।
রাজধানীতে কালোবাজারে অস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় চলে যান সুব্রত, যেখানে তুলনামূলক কম দামে অস্ত্র সংগ্রহ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এই কাজের সহযোগিতা করেন অপর কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ।
সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিল থানার একটি অস্ত্র মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম গত ৭ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই মামলার আসামির তালিকায় আছেন—সুব্রত বাইন ওরফে ফাতেহ আলী, মোল্লা মাসুদ (আবু রাসেল মাসুদ), এম এ এস শরীফ এবং আরাফাত ইবনে নাসির। মামলাটি বিচারিক কার্যক্রমের জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান।
১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং সাক্ষী হিসেবে ১৩ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সুব্রত গত দুই দশকেরও বেশি সময় ভারতে অবস্থান করছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরপর তিনি তাঁর পুরোনো বাহিনী পুনর্গঠনের জন্য নতুন সদস্য নিয়োগ ও অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন।
অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি কুষ্টিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি ও মোল্লা মাসুদ ২৭ মে ভোরে সেনাবাহিনীর একটি অভিযানে গ্রেপ্তার হন।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা এস এম শরীফের হাতিরঝিল এলাকার বাসায় নিয়মিত বৈঠক করতেন এবং সেখানেই অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখতেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন বিকেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শরীফ ও আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনার ভিত্তিতে হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন এসআই আসাদুজ্জামান।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন ছিলেন সুব্রত বাইন। সেই সময় তিনি ও মোল্লা মাসুদ মিলে “সেভেন স্টার গ্রুপ” নামক সন্ত্রাসী সংগঠন পরিচালনা করতেন। খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা তৈরি করেছিল এ বাহিনী। এরপর সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান।
হাতিরঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত মামলাটি পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ত্রগুলো অত্যাধুনিক এবং গুলিগুলো সক্রিয় ছিল। সুব্রত বাইন দেশে ফিরে মূলত নতুন করে অস্ত্র সজ্জিত বাহিনী গঠনের লক্ষ্যেই কাজ করছিলেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুব্রত বাইনের আইনজীবী বাদল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
১২৪ বার পড়া হয়েছে