সরকারি জমিতে সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ: তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন

রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সরকারি জমিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে আলোচিত ইস্যুতে তদন্ত শুরু করতে তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
রোববার (১৫ জুন) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সেতু বিভাগের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ ও হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সেতু বিভাগকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, বরাদ্দপ্রাপ্তদের এ সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কী পদ্ধতিতে, কী ভিত্তিতে এবং কার নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে—তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না এবং থাকলে কারা দায়ী, তা চিহ্নিত করবে কমিটি। পাশাপাশি বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পূর্বে রাজউক বা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তাও যাচাই করা হবে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য কেনা জমির ১ দশমিক ১৫ একর জায়গায় সচিব ও কর্মকর্তাদের জন্য চারটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সচিব ও উচ্চপদস্থ আমলাদের জন্য, যেখানে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টি ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্য একটি ভবনে সেতু বিভাগের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১১২টি ফ্ল্যাট রাখা হয়েছে। এসব ভবন নির্মিত হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনের তৃতীয় ধাপের দিয়াবাড়ি এলাকায়। সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালনকারী অনেক সচিব ও প্রভাবশালী আমলারা এখানে ফ্ল্যাট পেয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৩২ জন কর্মকর্তা ফ্ল্যাট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন এখনো চাকরিতে রয়েছেন, দুজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে কর্মরত এবং বাকিরা অবসরে গেছেন। বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এমনকি, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠজন ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, ফ্ল্যাট পাওয়া অনেক কর্মকর্তা এর আগেও রাজউকের প্লট পেয়েছেন—ফলে সরকারি সুযোগ-সুবিধার দ্বৈত ভোগ করছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে নেওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
১২১ বার পড়া হয়েছে