আফ্রিকায় ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করবেন বিল গেটস

মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫ ৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বখ্যাত দানশীল ব্যক্তিত্ব বিল গেটস ঘোষণা দিয়েছেন, তার সম্পদের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার আগামী দুই দশকে আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হবে।
ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দফতরে দেওয়া এক ভাষণে ৬৯ বছর বয়সী এই ধনকুবের বলেন, আফ্রিকার উন্নয়নে বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে এই মহাদেশের প্রতিটি দেশকে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিতে হবে।
দানের অঙ্গীকার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এর আগেও বিল গেটস জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগেই তিনি তার ৯৯ শতাংশ সম্পদ দান করে যাবেন। তার আশা, ২০৪৫ সালের মধ্যে এই সম্পদের পরিমাণ পৌঁছাবে ২০০ বিলিয়ন ডলারে এবং সেই সময়ের মধ্যেই গেটস ফাউন্ডেশনের কাজ সম্পূর্ণ হবে।
বিল গেটস বলেন, "আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আগামী ২০ বছরে আমার সব সম্পদ দান করব। এর বেশিরভাগই ব্যয় করা হবে আফ্রিকায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য।"
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও উদ্ভাবনের আহ্বান
গেটস তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “যেভাবে মোবাইল ব্যাংকিং আফ্রিকায় এক বিপ্লব এনেছে, তেমনি এআই ব্যবহারে স্বাস্থ্য খাতে একই ধরনের অগ্রগতি সম্ভব।” উদাহরণ হিসেবে তিনি রুয়ান্ডায় এআই-চালিত আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা শনাক্ত করতে সহায়ক হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার
গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য তিনটি:
১.মা ও শিশুর অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু রোধ
২.ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংক্রামক রোগমুক্ত রাখা
৩.লাখো মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা
বিল গেটস বলেন, “গর্ভবতী হওয়ার আগে নারীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে, পরবর্তী প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।”
ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক সংকট
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় আফ্রিকায় এইচআইভি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যখাত চাপে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে গেটসের ঘোষণাকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
একটি দৃষ্টান্তমূলক জীবনদর্শন
এক ব্লগ পোস্টে বিল গেটস লেখেন, “আমার মৃত্যুর পর মানুষ অনেক কিছু বলবে, কিন্তু কেউ বলবে না—‘সে ধনী হয়ে মারা গেছে।’ আমি নিশ্চিত এটা আমি করতে পেরেছি।”
ব্লুমবার্গের মতে, এমনকি তার ৯৯ শতাংশ সম্পদ দান করেও গেটস বিলিয়নিয়ারই থেকে যাবেন।
প্রযুক্তির দানশীল উদ্যোক্তা থেকে মানবকল্যাণে অগ্রপথিক
১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয় গেটসের সফর। এক সময় বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেও তিনি ধীরে ধীরে কোম্পানির সব পদ থেকে সরে এসে মানবকল্যাণে মনোনিবেশ করেন। ওয়ারেন বাফেটসহ অনেক দানশীল ব্যক্তির অনুপ্রেরণায় গেটস তার সম্পদের বড় অংশ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৪১ বার পড়া হয়েছে