রাজশাহীতে খড় ও ঘাসের দাম দ্বিগুণ, বিপাকে খামারিরা

শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫ ৯:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় খড় ও ঘাসের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।
গরুর প্রধান খাদ্য খড় এখন বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে, আর বৃষ্টির কারণে ঘাসের দামও অতীতের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এতে করে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার খামারিরা।
গোদাগাড়ী, চারঘাট, পুঠিয়া ও আশপাশের হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ টাকায়, যেখানে আগে এই দাম ছিল ৩ থেকে ৩.৫ টাকা। এক বান্ডিল ঘাস কিনতে লাগছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত বছর ঈদের সময় ছিল অর্ধেকের কাছাকাছি।
বিক্রেতাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টি হওয়ায় ধান ঘরে তুলতে দেরি হয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত খড় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। নতুন খড় না থাকায় বাজারে এখন পুরোনো সংরক্ষিত খড়ের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে করে তৈরি হয়েছে কৃত্রিম সংকট, আর সেই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে মুনাফা নিচ্ছেন।
চরাঞ্চলের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, “ধান কাটার সময়ই লাগাতার বৃষ্টি হয়। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় খড় জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে এখন দ্বিগুণ দামে কিনছি।”
খামারিরা বলছেন, গরুর দৈনন্দিন খাদ্যের খরচ এতটাই বেড়ে গেছে যে লাভ তো দূরে থাক, খামার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। গোদাগাড়ীর খামারি আমিনুল হক জানান, “প্রতিদিন যে পরিমাণ খড় দরকার, এখনকার দামে সেটা কেনা প্রায় অসম্ভব। খরার মধ্যে গরু মোটাতাজা করবো কীভাবে?”
পুঠিয়ার আরেক খামারি হাসিবুল হাসান বলেন, “হাটে গেলেই শোনা যায় ঈদের কারণে দাম বেশি। ঈদের কথা বলে যদি খাবারের দাম এভাবে বাড়ে, তাহলে খামার টিকে থাকবে না।”
কাশিয়াডাঙ্গার গৃহস্থ তৌফিক বললেন, “গত বছর যেই পরিমাণ খড় ৩ হাজার টাকায় পেয়েছি, এবার তার জন্যই ৬ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।”
রাজশাহী সিটি হাটের খড় ও ঘাস বিক্রেতা মো. শিবলী জানান, “আমরাও বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। বর্তমানে প্রতি হাজার আঁটি খড় কিনছি ৬ হাজার ৫০০ টাকায়, বিক্রি করছি ৭ হাজারে। নতুন খড় নেই বললেই চলে। ঘাসের দামও বাড়ছে বৃষ্টির কারণে।”
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এ মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ৬.৫ থেকে ৭ লাখ আঁটি খড় উৎপাদিত হয়েছে, যার মোট ওজন প্রায় ৪৯১ মেট্রিক টন। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২২ লাখ টাকা।
এই প্রসঙ্গে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শারমিন সুলতানা বলেন, “ঈদের সময় গরুর চাহিদা বাড়ে, আর শহরের গরুগুলো গ্রামের পরিবর্তে শহরেই চলে আসে। ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। কিছু ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাচ্ছেন, যা দুঃখজনক।”
এভাবে খড় ও ঘাসের মূল্যবৃদ্ধি ঈদকে সামনে রেখে পশু পালন ও মোটাতাজাকরণ কর্মসূচিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১২৩ বার পড়া হয়েছে