ভুয়া চাকরির ফাঁদে সৌদি আরবে দুই ভাই খুন

শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫ ৬:৩০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কানাডায় পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা কামরুজ্জামান কাকন। সেই স্বপ্নের পথ ধরেই প্রতারণার জালে আটকে পড়ে প্রাণ গেল তার ও ছোট ভাই কামরুল ইসলাম সাগরের।
পরিবার জানায়, ঢাকার নয়াপল্টনে অবস্থিত সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিনের সঙ্গে চুক্তি করে ২১ লাখ টাকায় কানাডা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন কাকন। অগ্রিম তিন লাখ টাকা নেওয়ার পর বহুদিন পেরিয়ে গেলেও বাহার তাকে বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন। পরে বাহার উদ্দিন প্রস্তাব দেন সাগরকে সৌদি আরবে ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সাগরকে সৌদির দাম্মামে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিশ্রুত চাকরির পরিবর্তে তাকে আটকে রেখে আরও টাকা দাবি করা হয়। বাবা মোশারফ হোসেন বাধ্য হয়ে আবারও চার লাখ টাকা দেন। কাজ হিসেবে দেওয়া হয় খাবার ডেলিভারির কাজ।
এরপর কাকনকেও সৌদি আরবে পাঠানো হয় ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর, আরও ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে। কিন্তু তিনিও একই ফাঁদে পড়েন। দুই ভাইকে একটি ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়, খাওয়া-দাওয়ারও ঠিকঠাক ব্যবস্থা ছিল না।
পরিবারের দাবি, বাহার উদ্দিন ওমরাহ ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসেন এবং মোশারফ হোসেনকেও একবার সৌদিতে নিয়ে যান। দেশে ফেরার সময় তার হাতে একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সৌদি ইমিগ্রেশন সেই ব্যাগে থাকা একটি পুটলি জব্দ করে। পরে বাহার দাবি করেন, ওই পুটলিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল এবং টাকা না দিলে ছেলেদের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন।
মোশারফ অভিযোগ করেন, ৯ মে বাহারের পক্ষের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে এবং তার বাবাকে জিম্মি করে নেয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশকে জানালে তার বাবাকে উদ্ধার করা হয়।
সবশেষে, ২২ মে সৌদি আরবের দাম্মামে একটি ফ্ল্যাট থেকে কাকন ও সাগরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ফ্ল্যাটে ঢোকার পর দুপুরের দিকে দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে পুলিশে খবর দেন ভবনের মালিক।
সৌদি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে মঞ্জু নামের এক বাংলাদেশির সংশ্লিষ্টতা শনাক্ত করেছে। পরিবারের ধারণা, বাহার উদ্দিনের পরিকল্পনায়ই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
এ ঘটনায় গাজীপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, সরকারি কোনো সূত্র থেকে তথ্য না এলেও পরিবার থেকে খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
১১৩ বার পড়া হয়েছে