বগুড়ায় শীর্ষ নেতাদের প্রার্থিতার পাশাপাশি সক্রিয় ‘ডামি’ কৌশল
সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বগুড়ার সাতটি সংসদীয় আসন ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা ছিল বেশ সরব।
আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এসব আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
বগুড়ার রাজনীতিতে বাড়তি আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার প্রার্থিতা। বগুড়া-৬ সদর আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বগুড়া-৭ গাবতলী–শাজাহানপুর আসনে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
তবে এই দৃশ্যমান উত্তেজনার আড়ালে বিএনপি নিয়েছে আরও একটি কৌশলগত প্রস্তুতি-‘ডামি প্রার্থী’ রাখার সিদ্ধান্ত।
বিদ্রোহী প্রার্থী নেই, বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত
বগুড়ার সাতটি আসনের কোনো একটিতেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও, তিনটি আসনে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন স্থানীয় তিন বিএনপি নেতা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা শুধু নামমাত্র প্রার্থী নন; মাঠ পর্যায়েও তুলনামূলকভাবে বেশ সক্রিয়।
যে তিন আসনে ডামি প্রার্থী
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দী–সোনাতলা):
এই আসনে বিএনপির ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসান তৈয়ব জাকির। এখানে দলের মূল প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ):
কেন্দ্রীয়ভাবে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।
বগুড়া-৭ (গাবতলী–শাজাহানপুর):
বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার পাশাপাশি ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টন।
কেন এই কৌশল?
বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা বলেন, তিনটি আসনে ডামি প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে পুরোপুরি রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সাংগঠনিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। কোনো কারণে তিনি প্রার্থী হিসেবে বহাল না থাকতে পারলে যেন আসন ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্যই এই প্রস্তুতি।'
এ ছাড়া বগুড়া-১ ও বগুড়া-২ আসনের মূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির বিষয়টি আলোচনায় থাকায় বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে ডামি প্রার্থী রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাঠে সক্রিয় ডামি প্রার্থীরা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নামের দিক থেকে ‘ডামি’ হলেও বাস্তবে এই প্রার্থীরাই অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে রাখছেন। পোস্টার লাগানো, কর্মীসভা, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
একজন বিএনপি নেতা বলেন, 'শেষ পর্যন্ত কে চূড়ান্ত প্রার্থী থাকবেন, সেটা বড় কথা নয়। ভোটের মাঠ প্রস্তুত রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য, আর সেই দায়িত্বটাই ডামি প্রার্থীরা পালন করছেন।'
সব মিলিয়ে, বগুড়ায় বিএনপির নির্বাচনী কৌশল এবার আবেগের পাশাপাশি হিসাবি ও বিকল্প পরিকল্পনায় ভর করে এগোচ্ছে। শীর্ষ দুই নেতার প্রার্থিতা এবং ডামি প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তা ভোটের ফলাফলে কী প্রভাব ফেলে-সেদিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
১২১ বার পড়া হয়েছে