সর্বশেষ

জাতীয়আমি এই এনসিপির অংশ হচ্ছি না: মাহফুজ আলম
হাদির হত্যার প্রধান আসামি ফয়সাল ও সহযোগী ভারতে পলাতক: ডিএমপি
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন জুবায়ের রহমান চৌধুরী
খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর, সংকটময় সময় পার করছেন: মেডিকেল বোর্ড
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা এক মাস বাড়াল এনবিআর
সারাদেশপটুয়াখালী-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী এবিএম মোশাররফ হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল
বগুড়ার সোনাতলায় ট্রেনের ধাক্কায় মা ও ছেলের মৃত্যু
দৌলতপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে বিদেশি মদসহ ব্যক্তি আটক
ঘাটাইলে বিএনপির মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ওবায়দুল হক নাসির
ইতালি পাচারকালে যুবক হত্যার ঘটনায় দালালদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
ধামরাইয়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধে ভাইয়ের হাতে খুন নিহত
আন্তর্জাতিকতাইওয়ানের উপকূলে ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
গৃহযুদ্ধের মধ্যেই মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ধাপ শুরু
খেলাঅনুশীলনের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢাকার সহকারী কোচ
সারাদেশ

মাগুরায় পাটকাঠি পুড়িয়ে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা, কমছে বেকারত্ব

রূপক আইচ, মাগুরা
রূপক আইচ, মাগুরা

রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:১৩ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
একসময় কৃষকের আঙিনায় অবহেলিত পড়ে থাকা পাটকাঠিই এখন মাগুরায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। পাটকাঠি পুড়িয়ে উন্নতমানের চারকোল বা পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক কালি উৎপাদন করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশে এ শিল্প ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী খাতে। এর মাধ্যমে যেমন আসছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা, তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক কর্মসংস্থান।

তবে চারকোল উৎপাদনের ধোঁয়া ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে জনমনে উদ্বেগও রয়েছে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে সরকার প্রণয়ন করেছে ‘চারকোল নীতিমালা–২০২২’। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে নেওয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। দেশের ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরাসহ কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে শতাধিক চারকোল কারখানা, যেগুলো থেকে বার্ষিক রপ্তানি সম্ভাবনা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।

মাগুরা জেলায় বর্তমানে ছয়টি কারখানা শতভাগ রপ্তানিনির্ভর পাটকাঠির চারকোল উৎপাদনে যুক্ত। বেকারত্বের অভিশাপে যখন অনেক তরুণ দিশেহারা, তখন নিজ এলাকায় শিল্পকারখানায় কর্মসংস্থান পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে শত শত পরিবারের মুখে। পরিবেশগত কিছু নেতিবাচক আলোচনা থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থানের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগুরা সদর উপজেলার নালিয়ারডাঙ্গী গ্রামে গড়ে উঠেছে শতভাগ রপ্তানিনির্ভর “মাগুরা চারকোল অ্যান্ড জুট প্রোডাক্ট ইন্ডাস্ট্রিজ”। প্রায় এক দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আসছে। এখানকার উৎপাদিত চারকোল রপ্তানি হচ্ছে চীনে। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এই চারকোল থেকে তৈরি হচ্ছে কম্পিউটার প্রিন্টারসহ নানা ধরনের উচ্চমানের কালি, যা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

কারখানার শ্রমিক চঞ্চল হোসেন চোখেমুখে গর্বের ছাপ নিয়ে বলেন, তাদের হাতে তৈরি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে—এই ভাবনাই যেন তাদের শ্রমের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। তিনি জানান, বর্তমানে মাগুরা জেলার ছয়টি কারখানায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে স্বাবলম্বী জীবন গড়ছেন। একইভাবে ওই এলাকার গৃহবধূ শ্রমিক মোমেনা বেগম, অঞ্জলি রানীসহ অনেকেই জানান, চারকোল কারখানায় কাজ করে তারা মাসে প্রায় দশ হাজার টাকা বেতন পান। অনেকেই স্বামী-স্ত্রী পুরো পরিবার মিলে এখানে কাজ করছেন, যা তাদের সংসারে সচ্ছলতা আনছে। তবে ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে বেতন বৃদ্ধির দাবিও রয়েছে তাদের।

স্থানীয় পাটকাঠির ব্যবসায়ী ইউনুস আলী ও রহিম জোয়ারদার জানান, আগে পাটকাঠির ন্যায্য মূল্য পেতে বেগ পেতে হতো। কিন্তু এই কারখানাগুলো চালু হওয়ার পর পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে। মূল্য বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

মাগুরা চারকোল অ্যান্ড জুট প্রোডাক্ট ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্যাক্টরি ম্যানেজার মো. ইউনুস আলী জানান, গাছপালায় ঘেরা সবুজ পরিবেশে অবস্থিত তাদের কারখানাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রায় শতভাগ নির্দেশনা মেনেই পরিচালিত হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিকরা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাটকাঠিকে চারকোলে রূপান্তর করেন। পরবর্তীতে আধুনিক ক্রাশিং প্রক্রিয়ায় তা বস্তাবন্দী করে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য করে তোলা হয়। এখান থেকে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম হয়ে চীনে চলে যায় এই চারকোল। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি না করেই শুধুমাত্র এ কারখানা থেকেই বছরে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন চারকোল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি মেট্রিক টন চারকোল ৭৫০ মার্কিন ডলার দরে রপ্তানি করে বছরে কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে চারকোল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে বলে জানান তিনি।

জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি এটিএম আনিসুর রহমান জানান, “মাগুরায় স্থাপিত চারকোল কারখানাগুলো অধিকাংশই গ্রামের দিকে অবস্থিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ কারখানায় প্রচুর গাছপালা থাকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে না বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে পরিবেশ সুরক্ষায় ক্ষতির পরিমাণ যেন সহনীয় থাকে, তা নিশ্চিত করতে এ কারখানাগুলোর ওপর কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারি বৃদ্ধি করা জরুরি।”

এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শোয়াইব মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় কারখানাগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে যদি এ ধরনের রপ্তানিনির্ভর শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হয়, তাহলে সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

পাটকাঠি থেকে চারকোলে মাগুরার এই রূপান্তর শুধু শিল্পায়নের গল্প নয়; এটি গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক নতুন সম্ভাবনার নাম। সঠিক নীতিমালা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই শিল্প ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে—এমন প্রত্যাশাই এখন সংশ্লিষ্ট সবার।

১১১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন