সারাদেশে জোরদার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ–২’
বৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:১৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ‘ফ্যাসিস্ট’ কার্যক্রম দমনে দেশজুড়ে আরও জোরদার করা হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ–২’।
অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও প্রবেশপথে পুলিশের তল্লাশি চৌকি (চেকপোস্ট) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহন দেখলেই থামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট এলাকা ও বাড়িতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৩৯৮ জনকে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে আটক করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব চেকপোস্টে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহনে কড়া নজরদারি চলছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটনের চন্দ্রিমা থানা এলাকা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বগুড়া ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার কয়েকটি চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, চলমান অভিযানে ২১ হাজার ৬৩০টি মোটরসাইকেল ও ১৯ হাজার ৯৪টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। সড়কে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এএইচএম শাহাদাত হোসাইন বলেন, চেকপোস্টে তল্লাশি পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। তবে বর্তমানে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ–২’ চলমান থাকায় সারা দেশেই পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে অপরাধীদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে—অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করতে সড়কে দিন-রাত পুলিশের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বুধবার থেকে চেকপোস্ট ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বসিলা, বাবুবাজার, পোস্তগোলা ব্রিজ, মাতুয়াইল ইউ-লুপ, স্টাফ কোয়ার্টার, কমলাপুর-বাসাবো সড়ক, গাবতলী, ৩০০ ফিট সড়ক, আবদুল্লাহপুর ব্রিজ, কামারপাড়া ও ধৌড় ব্রিজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১ হাজার ৯২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৯৮ জন ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে এবং ৫২৩ জন বিভিন্ন মামলার ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এ সময় একটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি বন্দুক, ৩ রাউন্ড গুলি, ৩ রাউন্ড কার্তুজ, ১১টি দেশীয় অস্ত্র ও ১২টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাজধানীর পল্টনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির বৈঠকে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান পুনরায় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার রাত থেকেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ–২’ শুরু হয়।
পুলিশের হিসাবে, ফেজ–২ শুরুর পর এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ২৬৪ জন ‘ডেভিল’ গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন দিনেই আটক করা হয় ১ হাজার ৮৬৬ জনকে।
এর আগে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের বাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযানটি প্রথম শুরু হলেও একপর্যায়ে তা শিথিল হয়ে পড়ে। তবে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনার পর আবারও ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ জোরদার করা হলো।
২১৯ বার পড়া হয়েছে