চিড়িয়াখানায় ঘটে যেতে পারতো স্মরণকালের ভয়াবহতা
শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪:২২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় গতকাল শুক্রবার এক অবিশ্বাস্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ‘ডেইজি’ নামের একটি সিংহী হঠাৎ খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসে।
মুহূর্তেই দর্শনার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুতই নিরাপত্তাকর্মীরা সবাইকে চিড়িয়াখানা থেকে বের করে দেন এবং এলাকাটি ঘিরে ফেলা হয়।
চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে এদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি ছিল। এমন সময়েই খাঁচা থেকে বেরিয়ে পাশের হরিণের খাঁচার কাছে চলে যায় সিংহীটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। প্রথমে তাকে মাংস খাইয়ে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। পরে ‘ট্রাংকুইলাইজার গান’ ব্যবহার করা হলে ধীরে ধীরে অচেতন হয়ে পড়ে ডেইজি। শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাকে নিরাপদে আবার খাঁচায় নেওয়া সম্ভব হয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢাকার চিড়িয়াখানায় ভিড় বেশি থাকে। আর এমন দিনেই অন্য কোনো প্রানী নয় বরং ভয়ংকর সিংহই বেড়িয়ে আসে খাঁচার বাইরে। সিংহের সীমা রেখার বাইরে চলে আসাটা আসলেই ডেকে আনতে পারতো বড় ধরণের বিপদ। যদি প্রানীটি ক্ষুব্ধ থাকতো তাহলে ধারাল নখের থাবায় ঘায়েল হয়ে যেতে পারতো দর্শনার্থীরা, হয়তো মারাও পড়তো অনেক।
হতাহতের পরে হয়তো কিছুদিন বন্ধ হয়ে থাকতো অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ঢাকা চিড়িয়াখানা। দায়িত্বে আবহেলা বা দোষ প্রমাণিত হলে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নগরবাসী কি আর তার প্রাণের শিশু সন্তানটিকে নিয়ে কখনও চিড়িয়াখানায় যেতে সাহস পেতো? স্বাভাবিকভাবেই তাৎক্ষনিক মৃত্যু ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হত ঢাকার শিশুদের জীবন।
কোনো ধরণের হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা না থাকলেও ঘটে যেতে পারতো চিড়িয়াখানায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এভাবে সিংহের বাইরে বের হয়ে আসাটা কি নিছকই একটি ঘটনা- ভুল নাকি এর আড়ালে আছে কারো দায়িত্বে অবহেলা বা অসৎ উদ্দেশ্য? আতঙ্ক এবং সন্দেহের কারণে দুটোই আলোচনায় আসে।
সিংহীটি কীভাবে খাঁচার বাইরে এলো-এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত বক্তব্য দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, 'ডেইজি কীভাবে বের হলো তা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। উদ্ধার করাই তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। গেট খোলা ছিল কিনা সেটাই এখন প্রধান প্রশ্ন। তদন্তেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।'
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. আতিকুর রহমানের মতে, গেটের তালা ভুলবশত খোলা থাকতে পারে। আবার প্রাণীর খেলা বা কামড়ে তালা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, 'পরিচর্যাকারীর ভুল থেকেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।'
এই ঘটনার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বয়জার রহমান এবং উপপরিচালক (খামার) শরিফুল হককে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিংহী বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় এবং দর্শনার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ডেইজির শারীরিক অবস্থা এখন স্বাভাবিক এবং পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় বর্তমানে মোট পাঁচটি সিংহ রয়েছে। ২০২০ সালে জন্ম নেওয়া ডেইজির সঙ্গী ২০২৩ সালের শেষের দিকে মারা যায়। কয়েক দিন আগে তার খাঁচায় নতুন এক পুরুষ সিংহ যুক্ত করা হয়েছে।
১০৪ বার পড়া হয়েছে