সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি: বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ৪:৪৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সাম্প্রতিক ভূকম্পন পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে আতঙ্ক নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে তারা এই সুপারিশ তুলে ধরেন। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
গত শুক্রবার ও শনিবার কয়েক দফা ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ডাকা এ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞদের কাছে স্বল্প সময়ের মধ্যেই লিখিত সুপারিশ জমা দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, 'আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাই না; আবার অনির্ভরযোগ্য কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শই হবে আমাদের পথনির্দেশনা।'
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ভূমিকম্প প্রস্তুতি জোরদারে বিশেষজ্ঞ কমিটি ও একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতেও ‘শুভেচ্ছা’ অ্যাপ ব্যবহারের নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ভূমিকম্পকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে-যেমন ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় ভূমিকম্প’ ইত্যাদি-যা জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারা বলেন, বৈজ্ঞানিক তথ্য ছাড়া এমন পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় এবং এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে স্বল্প ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা হলেও ঝুঁকি শূন্য নয়। এলাকার ভূতাত্ত্বিক উৎসগুলো বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য শেকিং লেভেল নির্ধারণ জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ইনডোর, আউটডোর, ব্যক্তি পর্যায় ও প্রতিষ্ঠান-এই চার স্তরে করণীয় নির্ধারণ করে তা সবার কাছে পৌঁছানোর পরামর্শ দেন তিনি।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর আওতাধীন স্থাপনাগুলোর অবস্থা দ্রুত মূল্যায়ন করা উচিত। বিশেষ করে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাতগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার প্রয়োজন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ভূমিকম্পের পর ফাটলধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক ভবনের প্রাথমিক মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পার্টিশন দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের পাঠানো লিখিত সুপারিশ পর্যালোচনা শেষে সরকার দ্রুতই একটি টাস্কফোর্স গঠন করবে। এতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন এবং ভূমিকম্প মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করবেন।
১০৬ বার পড়া হয়েছে