ভূমিকম্পে সরকারী উদ্ধার ব্যবস্থা সীমিত, নিজেই প্রস্তুতি নিন
সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ৫:৪০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এবং প্রস্তুতির তীব্র ঘাটতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ঢাকার নাগরিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ভূমিকম্পের প্রাথমিক সতর্কতা ও রেসকিউ ব্যবস্থার অভাব আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে।
ভূমিকম্প মোকাবেলায় সরকারি প্রস্তুতি :
১. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ ঘূর্ণিঝড় গবেষণা কেন্দ্র সচল থাকা
২. দুর্যোগে উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য সেরকিউ টিম বা দক্ষ জনবল থাকা
৩. মহড়া কিংবা সচেতনতামূলক যেকোনো কার্যক্রম চালু থাকা
৪. ফায়ার সার্ভিসের সর্বোন্নত সক্ষমতা থাকা
৬. ভূমিকম্পে আশ্রয় নেওয়ার মতো খোলা জায়গা থাকা
৭. ঘন বসতি সরিয়ে ফেলা বা পুনর্বাসনসহ নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা বা পরিকল্পিতভাবে ভবন তৈরি করা।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্র দীর্ঘ এক যুগ ধরে অচল। ফলে ভূমিকম্প চলাকালীন কোনো পূর্বসঙ্কেত বা কম্পনের রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
দেশের উদ্ধার ব্যবস্থাও জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে দুর্বল। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশে মাত্র ১৪,৫৬০ জনের জনবল রয়েছে। রাজধানীতে ২১ লাখের বেশি বহুতল ভবনের মধ্যে বড় ভূমিকম্প হলে তারা একসঙ্গে ২০–২৫টি ধসে পড়া ভবনের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারবে।
উদ্ধার কাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন হাইড্রোলিক কাটার, র্যাম, এয়ার লিফটিং ব্যাগ, সার্চ ভিশন ক্যামেরা, থার্মাল ইমেজার, চিপিং হ্যামার প্রায় নেই। হেভি ইকুইপমেন্টের অভাবে ধসে পড়া ভবন থেকে আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধার করা কঠিন।
ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ নগরায়নও বিপর্যয়কেও আরও ভয়ঙ্কর করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮ বা তার অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৩০–৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে দুই লাখের বেশি মানুষ প্রাণহানির শিকার হতে পারেন। তাছাড়া তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পদদলিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রও যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। সম্প্রতি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নিয়ে তথ্য বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আধুনিক সফটওয়্যার ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জরুরি তথ্য পাওয়া ও বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত উদ্ধার ব্যবস্থা ও সীমিত যন্ত্রপাতি একসঙ্গে মিললে বড় ভূমিকম্প মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।
তাই সব সমস্যা বিবেচনা করে দেখা গেল নিজে সচেতন না হয়ে বাঁচার কোনো উপায় তেমন একটা নেই। অর্থাৎ যদি বিপদে পড়েই যাই তাহলে আত্মরক্ষা না করে রেসকিউ টিমের আশায় বসে থাকাটা জীবন নাশের কারণ হতে পারে। তাই করনীয়:
১. হাতের কাছেই বাঁশি (ফুঁ দিয়ে ডাকার জন্য), ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন। মোবাইলে সবসময় চার্জ পূর্ণ করে কাছেই রাখুন।
২. ঘরের সবাইকে আগে থেকে বুঝিয়ে দেন কি কি করতে হবে, কোথায় কি আছে, ভূমিকম্পে ভয়ে সবাই এদিক ওদিক চলে গেলে পরে কিভাবে আবার একত্রিত হবে, কার কাছে গেলে নিরাপদ থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
৩. ঘরের বয়স্কদের আগে থেকেই নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে ফেলতে পারলে ভাল হয়।
৪. শিশুদের আবশ্যই আগে থেকে সব বুঝিয়ে রাখতে হবে। শিশুদের অবুঝ ভাবলেও স্বাভাবিকভাবেই ওদের মস্তিস্ক অনেক সচল থাকে। তাই সঠিক শিক্ষা দিতে পারলে তারাও অবস্থা বুঝে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।
৫. ভয় লাগবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আতঙ্কিত না হয়ে, গ্যাসের চুলা বন্ধ করে, বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন। ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
৬. ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।
৭. গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।
৮. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
৯. যদি ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়েই যান তাহলে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে। আওয়াজ করে পাশে কেউ থাকলে তাকে নিজের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করা উচিৎ।
১০. ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে খোলা আকাশের নিচে যেতে হবে। তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করবেন না।
১১. গাড়িতে থাকলে পদচারী-সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরে থাকুন।
১৭৭ বার পড়া হয়েছে