১৩ বছরেও শেষ হয়নি তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের বিচার
সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ২:৪৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ আগুনে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর অন্তত ১১৯ শ্রমিক নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যা মামলায় এতদিনে মাত্র ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে, যেখানে অভিযোগপত্রে সাক্ষী সংখ্যা ১০৪।
মামলাটি দায়েরের এক বছর পর অভিযোগপত্র এবং ২০১৫ সালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও গত এক দশকে ৬৮টি তারিখের মধ্যে মাত্র ১০ দিন সাক্ষী হাজির করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর ধার্য শুনানির দিনেও কোনও সাক্ষী উপস্থিত ছিল না। একইসঙ্গে জামিনে থাকা মূল আসামি দেলোয়ার হোসেনও ‘অসুস্থতার’ অজুহাতে দ্বিতীয়বারের মতো আদালতে অনুপস্থিত থাকেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২০২৬ সালের ৯ মার্চ।
২০২৪ সালের আগস্টের পর দায়িত্ব পাওয়া রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু সেলিম চৌধুরী জানান, মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয় যে রেবতি ম্যানসনে, সেখানে সংস্কার কাজ চলায় তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সময়মতো পাচ্ছেন না।
তার ভাষায়, 'সবকিছু নতুনভাবে বুঝতে সময় লাগছে। মাত্র এক বছর হলো দায়িত্ব পেয়েছি।' তবে আসামি দেলোয়ার দুইবার হাজির না হওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তিনিও নিশ্চিত হতে পারেননি।
দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে শ্রমিক অধিকারকর্মী ও মামলার পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ—রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলা ও নিষ্ক্রিয় ব্যবস্থাপনা।
তাদের প্রশ্ন, 'এত বড় হত্যাযজ্ঞের পরেও ১৩ বছরে মাত্র ১৬ সাক্ষী? তাহলে বিচার চাইবো কার কাছে?'
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের তাসলিমা আখতার বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও যদি তাজরীন মামলার বিচার না এগোয়, তাহলে আর কখন?'
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এমন মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। তিনি বলেন,
“কিছু রাজনৈতিক মামলার দ্রুত বিচার হলেও শ্রমিক ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট মামলা পড়ে থাকে। সরকারের সহায়তা ছাড়া এই দুর্বলতা কাটানো সম্ভব নয়।”
রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী ফরিদুর রহমানও স্বীকার করেন, মামলার অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ সাক্ষী—এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছি, চেষ্টা করবো সামনে গতি আনতে।'
তিনি গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে এ বিষয়ে আরও সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান।
তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি দুই তদন্ত কমিটিই মালিকপক্ষের ‘গুরুতর অবহেলা’কে দায়ী করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়—এটি স্পষ্টভাবে অবহেলার কারণে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড। সে অনুযায়ী দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় দেলোয়ার হোসেনকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়। ২০১৪ সালে তাকে গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি পান এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক পদও লাভ করেন।
২১৭ বার পড়া হয়েছে