সর্বশেষ

জাতীয়

ইউএসজিএস বলছে, ১ কোটির বেশি মানুষ অনুভব করেছেন প্রবল ঝাঁকুনি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ ৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় উৎপন্ন শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের হিসাবে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ এবং উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পের প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে—এই কম্পনে ৭ কোটির বেশি মানুষ মৃদু ভূকম্পন এবং আরও প্রায় পৌনে ৭ কোটি মানুষ হালকা ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। ঢাকায় শক্তিশালী কম্পন টের পেয়েছেন অন্তত ১ কোটির বেশি মানুষ। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে উচ্চ শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী ভূমিকম্পটিকে ‘কমলা’ শ্রেণিতে এবং আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে ‘হলুদ’ শ্রেণিতে রেখেছে সংস্থাটি।

ভূমিকম্পে রাজধানী ও নরসিংদী–নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় দেয়াল ধস, ভবনের রেলিং ভেঙে পড়া, মাটি ধসসহ নানা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়া বা দেয়াল ধসে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক মানুষ।

রাজধানীতে ভূমিকম্পের তীব্রতা এত বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পটি ঢাকার খুব কাছাকাছি উৎপন্ন হওয়ায় কম্পন ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়েছে। তিনি বলেন, “এ এলাকার ইতিহাসে ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প খুব কম ঘটেছে। আর ২০২৩ সালের রামগঞ্জের ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। এবার উৎপত্তিস্থল মাত্র ২৫ কিলোমিটার। ফলে ঢাকায় এমন তীব্র কম্পন হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, অনেক ভবন ও এলাকা দেবে যাওয়া, দেয়াল ফেটে যাওয়া—গত তিন দশকের কোনো ভূমিকম্পে এমন ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়নি। ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “বড় ভূমিকম্প ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসার প্রবণতা থাকে। সেই হিসেবে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই সবাইকে সতর্ক হতে হবে।”

ঢাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব ছিল সবচেয়ে স্পষ্ট। ছুটির দিনের সকালে বাসা, হাসপাতাল, মার্কেট ও অফিস ভবনে অবস্থানরত মানুষ হুড়োহুড়ি করে রাস্তায় নেমে আসেন। খোলা জায়গা কম থাকায় অনেকেই নিচে নেমেও অনিশ্চয়তায় ছিলেন। নিকেতনের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, “সেলুনে বসে চুল কাটাচ্ছিলাম, হঠাৎ চেয়ার এত কাঁপল যে মনে হচ্ছিল পড়ে যাব। বাইরে এসে দাঁড়িয়েই বুঝলাম শহরটা কতটা ঝুঁকিতে।”

ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ নগর কাঠামো নিয়ে গবেষণা আরও শঙ্কার কথা জানায়। ২০২৪ সালে রাজউক ও বিশ্বব্যাংকের ‘আরবান রেজিলিয়েন্স’ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন ভূমিকম্প দিনে হলে ২ লাখ ২০ হাজার এবং রাতে হলে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল–পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ জানান, ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিমের নিম্নাঞ্চল—যেমন প্রগতি সরণি, বালুনদী এলাকা, হাজারীবাগ, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, বছিলা, পূর্বাচল এবং উত্তরা—বড় ভূমিকম্পে তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। নব্বইয়ের দশকের পর এসব এলাকায় ভরাট জমিতে অগণিত স্থাপনা গড়ে ওঠায় ঝুঁকি বহুগুণে বেড়েছে।

২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ২০টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের রামগঞ্জের ৫ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন। সবচেয়ে বেশি ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরসিংদীর ভূমিকম্পটি ঢাকায় সাম্প্রতিক স্মৃতিতে সবচেয়ে তীব্র অনুভূত হওয়ায় ভবিষ্যৎ দুর্যোগ মোকাবিলায় এখনই সচেতনতা ও প্রস্তুতি বাড়ানো জরুরি।

১১৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন