শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকদের ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি শুরু
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ৭:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত এবং বিধিবহির্ভূত আদেশের কারণে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৩২তম থেকে ৩৭তম বিসিএস ব্যাচের প্রভাষকরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও বৈষম্যের অভিযোগে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আজ রোববার থেকে দেশব্যাপী ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা।
প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ করেছেন, চলতি বছরের জুন ও নভেম্বর মাসে দুই দফায় ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি (ডিপিসি) সভা অনুষ্ঠিত হলেও মন্ত্রণালয় পদোন্নতির আদেশ জারি করছে না। তারা দাবি করেছেন, আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি, অথচ মন্ত্রণালয় পদোন্নতির প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে।
বিসিএস শিক্ষা সমিতির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাসুদ রানা খান বলেন, 'আইনি জটিলতার অজুহাতে হাজার হাজার প্রভাষক পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এতে তারা সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।'
ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ২০০০ সালের বিতর্কিত বিধিমালা ৬(৫) অনুযায়ী আত্তীকৃত শিক্ষকরা সকল যোগ্যতা অর্জনের পর ক্যাডারে যোগদান করেন। কিন্তু ২০২৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বিধিমালা অমান্য করে বিশেষ মহলের সুবিধার্থে একাধিক আদেশ জারি করে। এতে প্রায় দুই হাজার আত্তীকৃত শিক্ষক অবৈধভাবে ক্যাডারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান।
বিচ্ছিন্ন ব্যাচের প্রভাষকরা দীর্ঘ ৭-১২ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩২তম ব্যাচের প্রভাষকরা চাকরির এক দশক পার হলেও প্রথম পদোন্নতি পাননি। ৩২তম থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রভাষক মোট আড়াই হাজারের বেশি, যারা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, অন্যান্য ক্যাডারের ৩৬তম ব্যাচের কর্মককর্তারা ২০২৩ সালে এবং ৩৭তম ব্যাচ ২০২৪ সালে পদোন্নতি পেয়েছে। চলতি সপ্তাহেও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার সুপারনিউমারি (পদের অতিরিক্ত) পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক পর্যায়ের ৩২তম থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তা পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। তারা আরও বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম ব্যাচ থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতি অবিলম্বে চাই। সরকার ইচ্ছা করলেই আমাদের পদোন্নতি দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন উদ্যোগ গ্রহণ ও যথেষ্ট সদিচ্ছা। এক্ষেত্রে তালিকায় থাকা ৩৫তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
ভুক্তভোগী শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ৪ জুনের ডিপিসি সভার পর থেকে ছয় মাস ধরে মন্ত্রণালয় ও মাউশি কর্তৃপক্ষের কাছে বিধি সংশোধন এবং পদোন্নতির বিষয়টি সুরাহা করার আবেদন জানান। দীর্ঘ সময় কোনো সমাধান না হওয়ায় প্রভাষকরা শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের পথে যান।
৩০ অক্টোবর তারা ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ’ ব্যানারে মাউশির সামনে অবস্থান, মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন করেন। আন্দোলনের চাপের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬ নভেম্বর ও পরে একাধিক ডিপিসি সভা করে। ডিপিসি কমিটি পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিলেও আদেশ এখনও জারি হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আত্তীকৃতদের মামলার জটিলতার কারণে পদোন্নতির আদেশ হঠাৎ আটকে যায়। প্রভাষকরা ৯ নভেম্বর সারা দেশে সরকারি কলেজে মানববন্ধন ও জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা ঘোষণা দেন, পদোন্নতির আদেশ না জারি হলে ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি শুরু করেন।
জানা যায়, ৩২তম ও ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের চার শতাধিক প্রভাষক চাকরিতে যোগদানের এক যুগ পরও প্রথম পদোন্নতি পাননি। এছাড়া ৩৪তম বিসিএস ১০ বছর, ৩৫তম বিসিএস ৯ বছর, ৩৬তম বিসিএস ৮ বছর, ৩৭তম বিসিএস ৭ বছর পার করলেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, প্রভাষকরা দেশের সব সরকারি কলেজে মানববন্ধন এবং জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করছেন। তারা জানিয়েছেন, পদোন্নতির আদেশ না জারি হলে আন্দোলন চলবে।
২৩২ বার পড়া হয়েছে