শুধু পরকীয়ায় নয়, আশরাফুলকে হত্যার আরো ভয়ানক তথ্য দিল র্যাব
শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে নির্মমভাবে হত্যা ও লাশ ২৬ খণ্ড করার ঘটনায় শামীমা আক্তারকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে পরিকল্পিত এই হত্যার পেছনের আরো ভয়ানক তথ্য। আজ শনিবার এসব তথ্য জানায় র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শামীমা হলেন মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা। শামীমা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং ও লাশ গুমের পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। শামীমাকে ১৪ নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, শুধু ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমের কারণেই নয় বরং টাকার লোভে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। আশরাফুল হককে হত্যা করে লাশ ২৬ খণ্ড করার আগে প্রচুর ইয়াবা সেবন করে জরেজ। এরপর হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে হত্যা করে। লাশ পাশের ঘরেই রেখে জরেজ ও শামিমা অন্য ঘরে রাত কাটায় এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামীমা আক্তার কোহিনুরকে (৩৩) আলামতসহ গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার শামীমা আক্তারের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও জরেজ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজ তাকে জানায়- তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। এর মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজ, ৩ লাখ পাবে শামীমা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার এক মাস আগে থেকেই শামীমা নিহত আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন আরও বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজ ও আশরাফুলের সঙ্গে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামীমা। সেখানে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশে আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজ বাইরে থেকে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে।
তদন্তে দেখা গেছে, ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রংপুর থেকে রওনা হন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিনি জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের জন্য ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়।
১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকায় পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল ড্রাম থেকে ২৬ টুকরো করা এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে লাশ শনাক্ত হয়- নিখোঁজ আশরাফুল হকের।
র্যাব জানিয়েছে, শামীমা ও জরেজ এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক রাখতেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শামীমা আশরাফুলকে আকৃষ্ট করে ব্ল্যাকমেইল করার ফাঁদে ফেলেন। হত্যার দিন আশরাফুলকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত শরবত খাওয়ানো হয়। পরে ইয়াবা সেবনের প্রভাবে জড়েজ হাতুড়ি দিয়ে তাকে হত্যা করে। লাশ পাশের ঘরে রেখে শামীমা ও জড়েজ রাত কাটায় এবং শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত হয়।
পরের দিন জরেজ বাজার থেকে দুটি ড্রাম ও চাপাতি এনে লাশ ২৬ খণ্ড করে ড্রামে ভরে বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলে। এরপর তারা সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়।
র্যাব জানিয়েছে, হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ আদায়। তবে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি না তা জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হবে। গ্রেফতার শামীমাকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে।
১১৮ বার পড়া হয়েছে