সর্বশেষ

সাহিত্য

মীর মশাররফ হোসেন: সমন্বয়, জাগরণ ও আধুনিকতার অগ্রদূত

গাউসুর রহমান 
গাউসুর রহমান 

বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২:৩৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা সাহিত্যের যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মীর মশাররফ হোসেনের আবির্ভাব, তা ছিল এক যুগসন্ধিক্ষণের কাল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর বাঙালি মুসলমান সমাজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এক গভীর সংকটের সম্মুখীন হয়।

একদিকে ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি অবিশ্বাস ও অসহযোগিতার মনোভাব, অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি রক্ষণশীলতা তাদের এক প্রকার বিচ্ছিন্নতার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখেছিল। এই পরিস্থিতিতে, যখন মুসলমান সমাজের সাহিত্যচর্চা মূলত দোভাষী পুঁথির গণ্ডিতে আবদ্ধ এবং আধুনিক বাংলা গদ্যের মূলধারায় তাদের উপস্থিতি প্রায় অনুপস্থিত, তখন মীর মশাররফ হোসেনের লেখনী এক আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়। তিনি কেবল একজন লেখক ছিলেন না, ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, একজন নির্ভীক সমালোচক এবং এক নতুন যুগের বার্তাবাহক। তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি মুসলমান সমাজে এক নবজাগরণের সূচনা করেন, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের সেতু নির্মাণ করেন এবং বাংলা গদ্য সাহিত্যে আধুনিকতার এক বলিষ্ঠ ভিত্তি স্থাপন করেন। 

মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্য জীবনের সূচনা হয় এমন এক সময়ে, যখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখের হাত ধরে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার জোয়ার বইছে। এই প্রবল স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একজন মুসলমান লেখকের পক্ষে নিজস্ব পরিচিতি নির্মাণ করা ছিল এক দুরূহ সাধনা। মশাররফ সেই সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ 'রত্নবতী' (১৮৬৯) একটি রূপকথাধর্মী গদ্য আখ্যান, যা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সৃষ্টি মনে হলেও এর গভীরে লুকিয়ে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। পুঁথি সাহিত্যের অলৌকিক ও ধর্মকেন্দ্রিক আখ্যানের জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে তিনি এক অসাম্প্রদায়িক , কল্পনাশক্তির উপর নির্ভরশীল আখ্যান রচনা করেন। এটি ছিল বাঙালি মুসলমান লেখক কর্তৃক আধুনিক কথাসাহিত্যের আঙ্গিকে প্রবেশের প্রথম সফল প্রচেষ্টা, যা তাঁর সৃজনী প্রতিভার অসাম্প্রদায়িক ভিত্তিকে নির্দেশ করে। তবে তাঁর প্রতিভার প্রকৃত স্ফুরণ ঘটে নাট্য রচনায়। তাঁর 'বসন্তকুমারী' (১৮৭৩) নাটকটি বাঙালি মুসলমান রচিত প্রথম আধুনিক নাটক হিসেবে বাংলা নাটকের ইতিহাসে এক মাইলফলক। কলকাতায় এর সফল মঞ্চায়ন প্রমাণ করে যে বিষয়বস্তু  সার্বজনীন হলে লেখকের ধর্মীয় পরিচয় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি বাঙালি মুসলমান সমাজকে আধুনিক শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যা ছিল তাদের সাংস্কৃতিক জাগরণের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

 

তবে যে রচনাটি মশাররফ হোসেনকে তাঁর সমসাময়িকদের থেকে স্বতন্ত্র এবং এক নির্ভীক সমাজ সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, তা হলো 'জমিদার দর্পণ' (১৮৭৩)। দীনবন্ধু মিত্রের 'নীল দর্পণ' (১৮৬০) নাটকটি যখন ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক জাতীয় জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠেছিল, তখন মশাররফ হোসেন এক আরও কঠিন ও বিপজ্জনক পথে অগ্রসর হন। তিনি, স্বয়ং জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও, দেশীয় জমিদারদের শোষণ, লুণ্ঠন ও প্রজাপীড়নের নগ্ন চিত্রটি তাঁর নাটকে তুলে ধরেন। 'নীল দর্পণ'-এর লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শোষক, কিন্তু 'জমিদার দর্পণ'-এর লক্ষ্য ছিল স্বদেশী, স্বজাতির শোষক শ্রেণি। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন যে, অত্যাচারীর কোনো ধর্ম বা জাতি হয় না।

 

'হায়! হায়! কি পরিতাপ! ধর্মের ভান করে স্ব স্ব প্রধান জমিদার মহোদয়গণ স্ব স্ব অধিকার মধ্যে যে প্রকার দৌরাত্ম করছেন, তাহা বর্ণনাতীত'
এই সংলাপের মধ্য দিয়ে তিনি যে সৎসাহস ও সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন, তা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে ছিল বৈপ্লবিক। এটি কেবল শোষিত প্রজাদের জাগরণের আহ্বান ছিল না, বরং শিক্ষিত সমাজের বিবেকের দরজায় ছিল এক প্রচণ্ড আঘাত। এই নাটক তাঁর আধুনিক, শ্রেণী-সচেতন এবং মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির এক উজ্জ্বল দলিল।

 

মীর মশাররফ হোসেনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি এবং বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় সম্পদ হলো 'বিষাদ সিন্ধু' (১৮৮৫-১৮৯১)। তিন খণ্ডে (মহররম, উদ্ধার, ও এজিদ বধ পর্ব) রচিত এই গদ্য আখ্যান কারবালার ঐতিহাসিক বিয়োগান্তক ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত। কিন্তু 'বিষাদ সিন্ধু' নিছক একটি ইতিহাস বা ধর্মীয় আখ্যান নয়; এটি এক মহাকাব্যিক গদ্য (Epic Prose), যেখানে ইতিহাস, কল্পনা, আবেগ এবং নাটকীয়তা একাকার হয়ে গেছে। এই গ্রন্থের মাধ্যমেই মশাররফের সমন্বয়বাদী প্রতিভার চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। তিনি আরবি-ফারসি সূত্র থেকে কারবালার মূল ঘটনা গ্রহণ করলেও, এর পরিবেশন ও বর্ণনায় পারস্যের 'মরসিয়া' বা শোককাব্যের গভীর আবেগ এবং বাংলার নিজস্ব কথকতারীতিকে একীভূত করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি এই মুসলিম ঐতিহ্যবাহী আখ্যানকে ধারণ করার জন্য আরবি-ফারসি শব্দবহুল 'মুসলমানি বাংলা'র পরিবর্তে বিশুদ্ধ, তৎসম শব্দবহুল, অলঙ্কারমণ্ডিত সাধু গদ্যকে বাহন হিসেবে বেছে নেন। এটি ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন যে, বাংলা ভাষার মূল স্রোতের যে শৈলী, তা মুসলিম জীবনের গভীরতম আবেগ, ধর্মীয় অনুভূতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। তিনি ইমাম হোসেন এবং এজিদের সংঘাতকে নিছক দুই ব্যক্তির ক্ষমতার লড়াই হিসেবে না দেখিয়ে, এটিকে শুভ ও অশুভের, ন্যায় ও অন্যায়ের এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব হিসেবে চিত্রিত করেছেন। এর ফলে 'বিষাদ সিন্ধু' নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের গণ্ডি পেরিয়ে এক সর্বজনীন মানবিক আবেদন তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল বাঙালি পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়। এই গ্রন্থটি বাঙালি মুসলমানকে একই সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি গর্বিত হতে এবং বাংলা ভাষার মূলধারার সঙ্গে একাত্ম হতে শিখিয়েছে—যা ছিল সামাজিক জাগরণ ও সমন্বয়ের এক অনন্য উদাহরণ।

 

তাঁর সাহিত্য প্রতিভার বৈচিত্র্য আরও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যখন আমরা 'বিষাদ সিন্ধু'র গম্ভীর, ধ্রুপদী গদ্যের জগৎ থেকে বেরিয়ে 'গাজী মিয়াঁর বস্তানী'র (১৮৯৯) শাণিত, ব্যঙ্গাত্মক গদ্যের মুখোমুখি হই। প্যারিচাঁদ মিত্রের 'আলালের ঘরের দুলাল'-এর দ্বারা প্রভাবিত হলেও, মশাররফের ব্যঙ্গ ছিল আরও তীক্ষ্ণ, বাস্তবধর্মী এবং লক্ষ্যভেদী। 'বিষাদ সিন্ধু'র লেখক এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রূপে আবির্ভূত হন। সাধু রীতির অলঙ্কার ঝেড়ে ফেলে তিনি প্রায় চলিত রীতির কাছাকাছি এক সরস, আটপৌরে ভাষায় সমকালীন সমাজের ভণ্ডামি, কুসংস্কার ও নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কশাঘাত করেন। 'গাজী মিয়াঁ' নামক এক কাল্পনিক চরিত্রের বয়ানে তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতিকে তুলে ধরেন। ধর্মব্যবসায়ী , কুসংস্কারে আচ্ছন্ন গ্রামীণ সমাজ, নব্য-শিক্ষিত 'বাবু' শ্রেণির অন্তঃসারশূন্যতা—কেউই তাঁর সমালোচনার বাইরে ছিল না। ‘টাকার নাম বাবা, টাকার নাম মা, টাকা ভজিলেই সব ভজা হয়’—এই ধরনের উক্তির মাধ্যমে তিনি সমাজের বস্তুসর্বস্ব এবং নীতিহীন রূপটিকে উন্মোচিত করেন। 'গাজী মিয়াঁর বস্তানী' রচনার মাধ্যমে মশাররফ এক আধুনিক সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, যিনি তাঁর লেখনীকে সমাজের চিকিৎসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই রচনাটি একদিকে যেমন বাঙালি মুসলমান সমাজের আত্ম-সমালোচনার এক প্রামাণ্য দলিল, তেমনই বাংলা ব্যঙ্গ সাহিত্যের এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন। একই লেখকের হাতে 'বিষাদ সিন্ধু' ও 'গাজী মিয়াঁর বস্তানী'র মতো দুই বিপরীতধর্মী গদ্যশৈলীর সফল প্রয়োগ তাঁর ভাষার উপর অসামান্য দখল এবং সৃজনী শক্তির ব্যাপকতার পরিচায়ক।

 

ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক প্রেক্ষাপটে মীর মশাররফ হোসেনের প্রগতিশীল ও আধুনিক মননের সবচেয়ে সাহসী প্রকাশ ঘটে তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ 'গো-জীবন'-এ (১৮৮৯)। তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে 'গো-রক্ষা' আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে তীব্র সাম্প্রদায়িক  উত্তেজনা চলছিল, সেই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তিনি কলম ধরেন। এই গ্রন্থে তিনি গো-হত্যা বন্ধের পক্ষে মত দেন, কিন্তু তাঁর যুক্তি কোনো ধর্মীয় অনুশাসনের উপর ভিত্তি করে ছিল না, বরং ছিল সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি দেখান যে, তৎকালীন  উপমহাদেশ একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল এবং সেই সময়ের অর্থনৈতিক বনিয়াদ অনেকাংশে গো-সম্পদের উপর নির্ভরশীল। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করতে এবং মুসলমানদের আহ্বান জানান অর্থনৈতিক যুক্তি এবং বৃহত্তর সামাজিক সম্প্রীতির স্বার্থে গো-হত্যা থেকে বিরত থাকতে।  যার জন্য তাঁকে নিজ সম্প্রদায়ের রক্ষণশীল গোষ্ঠীর তীব্র রোষানলে পড়তে হয়েছিল। 'গো-জীবন' তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক প্রোজ্জ্বল স্বাক্ষর। এটি প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একজন মননশীল চিন্তাবিদ, যিনি সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর মানবকল্যাণ ও সামাজিক সমন্বয়ের কথা ভাবতেন।

 

মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমী ও বহুমাত্রিক প্রতিভা। তিনি ছিলেন বাঙালি মুসলমান সমাজের সামাজিক জাগরণের অগ্রদূত, যিনি পুঁথি সাহিত্যের সীমাবদ্ধ জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক বাংলা গদ্যের সঙ্গে এই সমাজের পরিচয় ঘটান। তাঁর সাহিত্যকর্ম ছিল বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ—একদিকে 'বিষাদ সিন্ধু'র মহাকাব্যিক বিস্তার, অন্যদিকে 'জমিদার দর্পণ'-এর অগ্নিগর্ভ প্রতিবাদ; একদিকে 'গাজী মিয়াঁর বস্তানী'র শাণিত ব্যঙ্গ, অন্যদিকে 'গো-জীবন'-এর গভীর মননশীলতা। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে একাধারে সমন্বয়, জাগরণ ও আধুনিকতার বাণী প্রচার করেছেন। তিনি মুসলিম ঐতিহ্য ও বাংলা ভাষার মূলধারার মধ্যে এক সার্থক সমন্বয় সাধন করেছেন। তিনি তাঁর সমাজকে আত্ম-সমালোচনা ও সংস্কারের মাধ্যমে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এবং সর্বোপরি, তিনি এক আধুনিক, যুক্তিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক মনন নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধনের প্রয়াস পেয়েছেন। মীর মশাররফ হোসেন কেবল একজন লেখক ছিলেন না; তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন এবং একটি শতাব্দীর বিবেক। তাঁর নির্মিত পথ ধরেই পরবর্তীকালে কাজী নজরুল ইসলাম সহ বহু বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের মূলধারায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান তাই কেবল ঐতিহাসিক নয়, বরং এক চিরকালীন অনুপ্রেরণার উৎস।

১১৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
সাহিত্য নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন