জুলাই সনদ বাস্তবায়ন : শেষ পর্যন্ত সরকারকেই একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে
রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫ ৩:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেই প্রচেষ্টাও ভেস্তে যাচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত সাত দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল সোমবার। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকারকেই একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলে।
সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ৩ নভেম্বরের জরুরি সভায় দলগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে আহ্বান জানিয়েছিল। তবে সভায় স্পষ্ট জানানো হয়—আলোচনার আয়োজন সরকার করবে না; দলগুলোর সমঝোতা না হলে সরকার নিজস্বভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির অনাগ্রহেই সমঝোতার প্রক্রিয়া এগোয়নি। জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। জামায়াতের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পরও বিএনপি জানায়—তারা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের আহ্বানে নয়, কেবল সরকারের আহ্বানে আলোচনায় বসবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আলোচনায় আহ্বান জানান, আমরা অবশ্যই যাব। কিন্তু অন্য কোনো রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?
বিএনপির এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াত। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বিএনপির মহাসচিবকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, কিন্তু তাঁরা সাড়া দেননি। বিএনপি যদি আহ্বান করে, জামায়াত অবশ্যই যাবে। কিন্তু এখনকার অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, আগের রেজিমের (আওয়ামী লীগ সরকারের) মতো একই ধারা তারা অনুসরণ করছে।
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও আরও আট দল মঙ্গলবার ঢাকায় বড় সমাবেশ ডেকেছে। তারা পাঁচ দফা দাবি, যার মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও নির্বাচনের আগে গণভোট অন্যতম, অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সম্প্রতি বলেন, সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব।
বিএনপি–জামায়াতের দূরত্ব কমাতে গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদসহ নয় দল পৃথক আলোচনার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের চেষ্টা চলছে, তবে বড় দলগুলো অনড় থাকলে সমঝোতা কঠিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সতর্ক করে বলেন, কথায় কথায় রাস্তায় নামলে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ে। এক পক্ষ আন্দোলনে গেলে অন্য পক্ষও রাস্তায় নামবে- তাহলে কী হবে? এর জবাবে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বিএনপির আচরণ এখন আওয়ামী লীগের মতো হয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সরকারি মধ্যস্থতা ছাড়া দলগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে সমঝোতা হওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত সেপ্টেম্বরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আমরা দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারকেও আরও উদ্যোগী হতে হবে, আর বড় দলগুলোকে ছাড় দিতে হবে।
সবশেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সবাই সমঝোতা চায়, কিন্তু সবাই গরম বক্তৃতা দেয়। কেউ আলোচনায় বসবে না, কেউ আবার আঙুল বাঁকা করার হুমকি দেয়- এভাবে সমঝোতা কীভাবে সম্ভব?
১০৪ বার পড়া হয়েছে