তিন লাখ কোটি টাকার জাল নোট - বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের দুর্ধর্ষ ষড়যন্ত্র
শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে ― কারণ গোয়েন্দা তথ্য ও গণমাধ্যম রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ উন্নতমানের জাল নোট দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রুট দিয়ে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস, বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে অর্থায়ন করা।
জাল নোটের ভয়াবহ প্রবাহ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা
বিশ্বস্ত সূত্র মতে, ভারতের মাটিতে বহুদিন ধরে বিশেষায়িত প্রিন্টিং প্রেস, উন্নত কাগজ ও নিরাপত্তা উপাদান ব্যবহার করে বাংলাদেশি টাকার অবিকল জাল নোট ছাপানো হচ্ছে। এসব নোটে জলছাপ, হলোগ্রাম, নিরাপত্তা সুতা ― এমনকি খালি চোখে ও ব্যাংকের যাচাই মেশিনেও ধরা যায় না এমন প্রযুক্তি যুক্ত। চোরাকারবারিরা সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়ার গোপন রুট ব্যবহার করছে।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কমপক্ষে অর্ধলাখ কোটি টাকার জাল নোট আটক করেছে। প্রতিবেশী দেশের চক্র ও কিছু স্থানীয় চক্র মিলেই এ অপতৎপরতা চালাচ্ছে, যাদের সাথে কিছু দুর্নীতিবাজ বাঙালি ব্যক্তিও জড়িত। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের টাকা তৈরি ও আকারের সাথে মিল রেখে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে জাল নোট প্রিন্ট হচ্ছে, যা সনাক্তকরণ জটিল করে তুলেছে।
অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সামাজিক-রাজনৈতিক সংকট
এত বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে পড়লে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ; মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, বাজারমূল্য অস্থিতিশীলতা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ, সাধারণ মানুষের প্রতি অবিশ্বাস, এবং দেশজুড়ে আর্থিক অব্যবস্থাপনা ছড়িয়ে পড়বে। দেশীয় চক্র ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল আর্থিক সেবাতেও জাল নোট ঢোকানোর অপচেষ্টা করছে।
এর প্রেক্ষাপটে, বেশ কয়েকটি বড় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট) পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সতর্কতামূলক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। সীমান্তবর্তী এলাকাতে তল্লাশি, সন্দেহভাজন চিহ্নিতকরণ এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।
জনগণের জন্য জরুরি সতর্কতা
নোট যাচাই: বাজারে লেনদেনকালে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য (জলছাপ, কাগজের গুণ, নিরাপত্তা সুতা, রং পরিবর্তনশীল কালি, ক্ষুদ্র লেখা) যাচাই করা জরুরি।
ডিজিটাল লেনদেন: বড় অংকের লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেল ও ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সন্দেহজনক নোট: সন্দেহজনক নোট পাওয়া গেলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো, অথবা জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করুন।
জনমত গঠন: সোশ্যাল মিডিয়া বা লোকমুখে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াবেন না; সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা গ্রহণ না করার পরামর্শ।
বৈধ নোটের গাইড: বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা পোস্টারে বৈধ নোটের বৈশিষ্ট্য দেখুন, এবং সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন।
সরকারের জন্য করণীয়
সীমান্তে নজরদারি: সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, ডগ স্কোয়াড, ড্রোন ও বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইনি ব্যবস্থা: জালনোট সংশ্লিষ্ট কারবারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পাবলিক ক্যাম্পেইন: সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমসহ স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ: ব্যাংককর্মীসহ অন্যান্য ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানকর্মীর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, উন্নত যাচাইযন্ত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: ভারতসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জাল নোট বন্ধে কার্যকর কূটনৈতিক চাপ ও সমন্বয় জরুরি।
শেষ কথা
এত বড় অঙ্কের জাল নোট প্রবাহ বাংলাদেশের অস্তিত্ব, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার চরম সংকট যেন না ডেকে আনে ― এ জন্য জনসাধারণের সতর্কতা, সাহসী ভূমিকা এবং রাষ্ট্রের যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিলে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা সহজ হবে; পাশাপাশি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে সীমান্ত-অর্থনীতি-সভ্যতা-রাজনীতি রক্ষা করা সম্ভব।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
১১৫ বার পড়া হয়েছে