জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে গুজব মোকাবেলায় সতর্কবার্তা

বৃহস্পতিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশজুড়ে শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড প্রতিরোধে নতুন জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু ১২ অক্টোবর শুরু থেকেই নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গুজবের মধ্যে আছে—টিকা নিলে মেয়েরা মা হতে পারবে না, ছেলেরা পুরুষত্ব হারাবে, বাংলাদেশ গরিব হওয়ায় শিশুদের গিনিপিগ বানানো হচ্ছে ইত্যাদি। এসব দাবি সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাহমিদ আহমেদ বলেছেন, ‘গুজবগুলো নতুন নয়। কোভিড টিকার সময়েও একই ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ও পরীক্ষিত এই টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর জানান, ২০২১ সালে দেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৮ হাজার মারা গেছে। আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশ শিশু। এ কারণেই জাতীয়ভাবে প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১২ অক্টোবর টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষিত ও অনুমোদিত এ টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর।'
টিকাটি ভারতের বায়োলজিক্যাল ই কোম্পানির তৈরি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও গ্যাভি’র সহায়তায় দেশের ইপিআই (প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) অধীনে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এই ধরনের ক্যাম্পেইন চালু করা অষ্টম দেশ।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, গুজবের কারণে শিশুরা টিকা নিতে অনিচ্ছুক ছিল। ‘টিকা নিলে সন্তান হবে না, ক্যানসার হবে’—এ ধরনের ভিত্তিহীন কথা শোনা যাচ্ছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরো ব্যাপক সচেতনতা ও প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাজুল ইসলাম আবদুল বারী বলেছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যাচাই-বাছাই করে টিকা অনুমোদন দেয়। এই টিকা নিরাপদ ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গুজবে কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
টিকা নেওয়ার পর কিছু শিশুর মধ্যে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন হাত লালচে হওয়া, হালকা জ্বর বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে যা স্বাভাবিক ও অল্প সময়ের জন্য হয়।
টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। আবহাওয়া ও অপরিষ্কার পানির কারণে রোগটি দ্রুত ছড়ায় এবং চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে আসায় টিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
সরকার গুজব রোধে বিশেষ প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে গুজব ছড়ানো এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এখনও ২ কোটির বেশি শিশু নিবন্ধন করেছে এবং ১ কোটি ৪ লাখের বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেওয়াই একমাত্র কার্যকর পথ যা শিশুদের জীবন রক্ষা করবে এবং টাইফয়েডের সংক্রমণ কমাবে।
১১৩ বার পড়া হয়েছে