কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুনে ধ্বংস কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য

সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫ ২:১৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন খাতের পণ্য।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বৃহৎ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের পণ্য এবং ই-কমার্সের মালামাল—সবকিছুই ছিল এই কার্গো ভিলেজে। সবমিলিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কার্গো ভিলেজে রাখা পণ্যগুলো এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই ছাড় হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই আশায় এখন শুধুই ছাই আর ধোঁয়া।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি পোশাক কারখানার রপ্তানিযোগ্য পণ্য এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে। সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, “উচ্চমূল্যের পণ্য এবং জরুরি শিপমেন্ট আকাশপথে পাঠানো হয়। এখানে স্যাম্পল থেকে শুরু করে কাঁচামাল—সবই পুড়ে গেছে।”
তিনি আরও জানান, দ্রুত সমন্বয় সভার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নির্ধারণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উত্তরার ‘ফার্স্ট অ্যান্ড সেফ’ নামের একটি গার্মেন্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বেনজির জানান, হংকং ও চীন থেকে আমদানিকৃত রেডিমেড গার্মেন্টসের দুইটি চালান পুড়ে গেছে। এতে তার পাঁচ লাখ টাকার পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। “আমি ছোট ব্যবসায়ী, এই ক্ষতি আমার জন্য অনেক বড়,” বলেন তিনি।
জেমটেক্স লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি ইমরান আহমেদ জানান, ভারত থেকে আকাশপথে আনা প্রায় ৪০ কেজি লেইচ (অ্যাক্সেসরিজ) আগুনে পুড়ে গেছে বলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানিয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা। এই মালামাল দিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার ডলারের রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল, যা এখন অনিশ্চিত।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাওন এন্টারপ্রাইজের মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, আগুনে চট্টগ্রাম হাসপাতালের জন্য আনা প্রায় ৩,৬০০ ডলারের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এবং বিজিএপিএমইএ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “এই আগুনে দেশের রপ্তানি খাত সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এটি পরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র কি না, তা সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।
বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. শাহরিয়ার জানান, শুধুমাত্র তাদের সদস্যদেরই ১০০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। তবে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, যেহেতু বেশিরভাগ পণ্য বিমার আওতায়, তাই ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ থাকলে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন পরিদর্শন শেষে জানান, “আমদানি করা সব পণ্য পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ চলছে।” তিনি আরও বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল এলাকায় বিকল্প স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখা যায়। এছাড়া পণ্য খালাসের সময় ৭২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করার নির্দেশ দিয়েছেন উপদেষ্টা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, আপাতত জিএসই মেইনটেন্যান্স এলাকায় কায়িক পরীক্ষার কাজ চলছে এবং ৯ নম্বর গেট দিয়ে খালাস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশের প্রধান বিমানবন্দরসহ সব বন্দরে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।”
১১৪ বার পড়া হয়েছে