গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: নেতানিয়াহু সরকার টেকানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ

শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় দুই বছর ধরে চালানো অভিযানের পর যুদ্ধবিরতিকে ‘মহান দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় চলা সামরিক অভিযান ও কূটনৈতিক চাপের মধ্য দিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, নেতানিয়াহুর জন্য এটি বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি ইসরায়েলি সমাজের বড় অংশের সমর্থন পেলেও নেতানিয়াহুর চরম ডানপন্থী জোটসঙ্গীরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। চুক্তির প্রথম ধাপে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবে, যার মধ্যে ২৫০ জনকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে কট্টর জাতীয়তাবাদীরা চুক্তির বিরোধিতা করছেন।
বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, গাজায় ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের দখল, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ এবং সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের স্বপ্ন এখন এই চুক্তির ফলে ভেঙে যেতে পারে। চুক্তি অনুসারে, ইসরায়েলকে গাজায় ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে এবং গাজা দখল থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। একই সঙ্গে হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ বা ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার জন্য হুমকির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁর প্রধান সমর্থকরা, বিশেষ করে চরম ডানপন্থী দলগুলি, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগে তাঁকে আক্রমণ করেছিল। এখন তাদের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সমর্থনের ওপরই নেতানিয়াহু টিকে আছেন, বিশেষত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে।
গত শুক্রবার মন্ত্রিসভার ভোটে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও, ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ও নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। বেন গাভির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘হামাসের শাসন ভেঙে না পড়লে জিউইশ পাওয়ার সরকারই ভেঙে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় রয়েছে গাজায় সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি পক্ষের একটি বিকল্প কমিটি গঠন। তবে নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, তারা কেবল ‘প্রথম ধাপ’ নিয়েই একমত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে বন্দিবিনিময় ও আংশিক সেনা পুনর্বিন্যাস।
ট্রাম্প আগ্রাসী ভূমিকায় থেকে গাজা যুদ্ধে ধৈর্যের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত সমাধানের চাপ দিয়েছেন। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি নিজেও যুদ্ধ শেষ করতে রাজি ছিলেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সৌদি আরবের মতো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের সুযোগ এ সময়ে কাজে লাগাতে চান।
এদিকে, বিরোধী নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে গেলে এবং ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করলে নেতানিয়াহুর জোট সরকার ভেঙে যেতে পারে এবং তাঁর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ বন্ধ হবে। আগামী নির্বাচনের তারিখ ২০২৬, কিন্তু নেতানিয়াহু এটিকে যতটা সম্ভব দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করতে পারেন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ক্ষোভ থাকলেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখানে বেড়েই চলেছে, যা নেতানিয়াহুর জন্য একটি বড় সমর্থন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ট্রাম্পই তাঁকে ‘জনপ্রিয় নেতা’ হিসেবে তুলে ধরছেন।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে