সর্বশেষ

অপরাধ

ভারতের গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই, জেলে বসেই সামলায় সাম্রাজ্য

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ৭:০২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ভারতের উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে বন্দী থাকলেও থেমে নেই লরেন্স বিষ্ণোইয়ের অপরাধ সাম্রাজ্য।

আধুনিক প্রযুক্তি ও সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জেলের ভেতর থেকেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে তাঁকে সম্প্রতি কানাডা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) বলছে, বিষ্ণোই বর্তমানে কারাবন্দী হলেও তাঁর গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা সাত শতাধিক এবং তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দুবাইয়েও সক্রিয়।

৩২ বছর বয়সী বিষ্ণোই বর্তমানে ভারতের গুজরাটের সবরমতী কারাগারে বন্দী। কিন্তু গোপনে পাচার হওয়া একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে তিনি হুমকি, হত্যা পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভারতের একাধিক গণমাধ্যম ও তদন্ত সংস্থার দাবি, বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে হুমকি দেওয়া, পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যার নির্দেশ, এমনকি কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যা পরিকল্পনায়ও বিষ্ণোইয়ের গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

লরেন্স বিষ্ণোইয়ের শুরুটা হয় পাঞ্জাবের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। হরিয়ানা পুলিশের এক কনস্টেবলের ছেলে হিসেবে সাধারণ জীবনের পথে চললেও, পরবর্তীতে চণ্ডীগড়ে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন।

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময়েই তিনি বিভিন্ন সহিংস ছাত্র সংঘর্ষে যুক্ত হন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর গ্যাং গঠনের সূচনা, যা পরে বিস্তার লাভ করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড় ও রাজস্থানে।

গোপন নেটওয়ার্ক ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে বিষ্ণোই তৈরি করেন এমন এক গ্যাং যেখানে সদস্যরা একে অপরকে চেনেন না, ফলে একজন ধরা পড়লেও পুরো নেটওয়ার্ক অক্ষত থাকে।

বিষ্ণোই একাধিক সাক্ষাৎকারে নিজের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অস্বীকার করলেও গ্যাংস্টার পরিচয় নিয়ে আপত্তি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, “এটা সেই পরিচয়, যা ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন।”
তিনি নিজেকে দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবেও উপস্থাপন করেন এবং খালিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করে ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলেও দাবি করেন।

২০১৮ সালে বিষ্ণোই প্রথম জাতীয় আলোচনায় আসেন সালমান খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে। ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলায় সালমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিষ্ণোই এই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। কারণ, বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের জন্য এই হরিণ পবিত্র।

২০২৩ সালে কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার ঘটনায় বিষ্ণোইয়ের নাম ওঠে আসার পরই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। কানাডা অভিযোগ করে, ভারত সরকার বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সহায়তায় প্রবাসী শিখদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে কানাডার জননিরাপত্তা মন্ত্রী গ্যারি আনান্দাসাঙ্গারি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন, লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ গোষ্ঠী খুন, চাঁদাবাজি, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত বলে জানানো হয়।

এ সিদ্ধান্তের ফলে কানাডা সরকার এখন গ্যাংয়ের সদস্যদের তহবিল জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পারবে।

ভারত এখনও বিষ্ণোই গ্যাংকে ঘিরে কানাডার অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেনি। তবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ জানান, ভারতীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তদন্তে সহযোগিতা করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এ গ্যাংকে ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা ভবিষ্যতে ভারত-কানাডা সম্পর্কের গতিপথ প্রভাবিত করতে পারে।

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
অপরাধ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন