৪১ বছর পর মুখোমুখি: ভারত-পাকিস্তানের ঐতিহাসিক ফাইনাল

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শারজাহ থেকে কলম্বো, করাচি থেকে মিরপুর—গত চার দশকে ক্রিকেটের মাঠে এমন এক ফাইনালের অপেক্ষা ছিল অনেক দিন।
অবশেষে আজ রবিবার দুবাইয়ে সেই অপেক্ষিত মেগা ফাইনাল, যেখানে দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে। কে জিতবে এই স্নায়ু-শূন্য মুহূর্তের লড়াই? টকশোতে যেমন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার কিংবা শোয়েব আখতারের মত বিশ্লেষকরা আলোচনায় ব্যস্ত, তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও তার অনুমান প্রকাশ করেছে।
গুগল জেমিনির মতে, ‘এই ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ চাপ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে অপ্রত্যাশিত ফল আসতে পারে। তবুও, ভারতের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।’ চ্যাটজিপিটি অনুমান করেছে, ‘ফর্ম, ভারসাম্য এবং দলে গভীরতা বিবেচনা করলে, ভারতের জয় প্রায় নিশ্চিত। ব্যাটিং ও বোলিং উভয় বিভাগেই তারা সামান্য এগিয়ে। ভারতের জয়ের সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে, আর পাকিস্তানের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।’ তবে ম্যাচের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওভার পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
দুবাইয়ের পিচ রান তাড়া করার জন্য বেশ ভালো। পাওয়ার প্লেতে ৮০ রানের ওপরে স্কোর করলে ১৭০-এর মতো রান তাড়া করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারত আনুমানিক ১৮-১৯ ওভারেই ৬-৭ উইকেটে জয় নিশ্চিত করতে পারবে বলে ধারণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।
তবে এই ফাইনালের আবেগ, উত্তেজনা আর মানসিক চাপ AI-এর বোঝা সম্ভব নয়। পাকিস্তান অধিনায়কের গ্রুপ পর্বে হ্যান্ডশেক এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি এবং দলের মধ্যে বিরাজমান ক্ষুধার কথা বুঝতে পারে না কোনো মেশিন। অতীত ইতিহাস পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও বর্তমান ফর্ম ভারতকে এগিয়ে রাখে। ৪১ বছরের টুর্নামেন্টে প্রথমবার ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান ফাইনালে দেখা হচ্ছে। বহু বছর ধরে আয়োজনকারীরা এমন ম্যাচ দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আজহারউদ্দিন-আমির সোহেল কিংবা শচীন টেন্ডুলকার-ওয়াসিম আকরামদের সময় ফাইনালে এই মেগা মুখোমুখি হয়নি।
১৬ আসরে ভারত ৮ বার চ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তান মাত্র দুবার। ODI-এর স্বর্ণযুগে এশিয়া কাপেও তারা একসঙ্গে ফাইনালে উঠেনি। টি২০ ফরম্যাটেও ভারত অনেক দূরে পাকিস্তানের থেকে। সাম্প্রতিক সময়ের মুখোমুখি ম্যাচে ভারতের জয় শতকরা ৮৮.৮৯, পাকিস্তানের ৫১.৫২। তবে ফাইনালে এই পরিসংখ্যান কতটা প্রযোজ্য, তা সময় বলবে।
ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি ফাইনালের ইতিহাসে পাকিস্তান সাতবার জিতেছে, যেখানে ভারত তিনবারই জয়ী। তাই ফাইনালের মঞ্চে পাকিস্তান ভিন্ন রকম হয়ে ওঠে। এবারও পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার বলছেন, “আমরা জানি ফাইনালে কী করতে হবে। যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে।” শাহিন শাহ আফ্রিদিও ঘোষণা করেছেন, “আমরা ফাইনালের জন্য প্রস্তুত।”
অন্যদিকে ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব মুখে সরাসরি পাকিস্তানের নাম আনছেন না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ওভারে জয় পাওয়া পর তিনি বলেছেন, “মনে হচ্ছে সেমিফাইনাল নয়, ফাইনাল খেলছি। সবাইকে বলেছি যেন সেমিফাইনাল মানসিকতায় খেলি। এখন পুরো টিম ফিট এবং মনোযোগী।”
তবে ভারতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ের ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওপেনার শুভমান গিল ধীরে ধীরে ফর্মে আসছেন, কিন্তু মিডলঅর্ডারে তিলক ভার্মা ছাড়া কেউ ভাল করতে পারেননি। হার্দিক পান্ডিয়া ছাড়া নিচের দিকে বড় পরীক্ষার সুযোগ অনেক হয়নি। বুমরাহ পেস বোলিংয়ে কমপ্রেশন আনতে পারেননি, যদিও স্পিনার কুলদীপ ও বরুণ ধারাবাহিক। পাকিস্তানের ওপেনার সাইম আইয়ুব মেলেনি, তবে লোয়ার অর্ডারে ফাহিম আশরাফ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ধ্বংসাত্মক বোলিং দলকে শক্তি দিয়েছে।
পাকিস্তান এই আসরে ভারতের সঙ্গে দুটি ম্যাচ হেরেছে, বাকি চারটি জিতেছে। তবে পাকিস্তান ড্রেসিংরুমে ‘হার’ শব্দটি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি রয়েছে; সাবেক অধিনায়ক রিজওয়ান একবার বলেছেন, “আমরা প্রত্যেক ম্যাচ থেকে শিখি, হয় জিতি নয়তো।”
আজকের এই ম্যাচে কে জিতবে—সেই উত্তেজনা ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়ে নতুন ঢেউ সৃষ্টি করবে।
১১৯ বার পড়া হয়েছে