একটা ফোনেই বেড়িয়ে পড়ে যারা তাদেরই জীবন পড়ে মৃত্যুঝুঁকিতে

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের যেকোনো প্রান্তে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া মাত্রই জীবন ঝুঁকি নিয়ে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীরা।
জীবন বাঁচাতে আগুনের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, নিম্নমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ঘাটতিতে প্রায়শই তাদেরকেই দিতে হচ্ছে চরম মূল্য—প্রাণহানির মাধ্যমে।
সর্বশেষ গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক সাহারা মার্কেটের একটি কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর দগ্ধ হন ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক জান্নাতুল নাইম। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন কর্মী এখনও চিকিৎসাধীন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ বছরে (২০১৫-২০২৫) অগ্নিকাণ্ড নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরও ৩৮৬ জন। নিহতদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে কেমিক্যাল বা অন্যান্য জ্বলনশীল পদার্থের বিস্ফোরণে। আর স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৫১ জন সদস্য প্রাণ দিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ২০২২ সালের ৫ জুন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৩ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত হন। সেখানে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুত ছিল, যা বিস্ফোরণের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সারা দেশে বর্তমানে ৫৩৭টি স্টেশন এবং প্রায় ১৪ হাজার ৫৭০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী থাকলেও, ঝুঁকিপূর্ণ আগুন, বিশেষ করে কেমিক্যাল বা বিস্ফোরক সংরক্ষণের স্থানগুলোতে আগুন নেভাতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের বড় অভাব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে অগ্নিকাণ্ডের স্থলে পৌঁছেই গ্যাস ও কেমিক্যাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে আগুনের ধরন নির্ণয় করা হয়। কিন্তু দেশে মাত্র ১৫–২০টি স্টেশনে এ ধরনের যন্ত্র রয়েছে।
অন্যদিকে, যেসব পিপি (Personal Protective Equipment) কর্মীদের ব্যবহার করার কথা, সেগুলোর মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। নিয়ম অনুযায়ী, এসব পিপি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। তবে গাজীপুরের অগ্নিকাণ্ডে দেখা গেছে, পিপি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, যা এর মান নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেমিক্যাল গুদামের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় আগুন নেভাতে অটোমেটিক ফায়ার ফাইটিং রোবট ও উন্নত যন্ত্রপাতি জরুরি। বর্তমানে দেশে মাত্র ৭টি রোবট রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এ বিষয়ে জানতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সংস্থাটির মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, “কেমিক্যাল সম্পর্কিত অগ্নিকাণ্ড আগের তুলনায় বেড়েছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।”
প্রযুক্তিগত ঘাটতি, মানহীন সুরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রস্তুতির অভাব—এই তিনের সম্মিলিত ফল হলো ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মৃত্যুমিছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যারা মানুষের জীবন বাঁচান, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
১২৪ বার পড়া হয়েছে