সর্বশেষ

জাতীয়

জাতিসংঘে প্রফেসর ইউনূস: গণতন্ত্র-সংস্কার, মানবাধিকার ও দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগের অঙ্গীকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:৩২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন।

তাঁর ভাষণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার, দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, নারীর ক্ষমতায়ন ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উঠে আসে।

গণতান্ত্রিক সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্য
ড. ইউনূস জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচার পুনরাবৃত্তির সুযোগ থাকবে না।

মানবাধিকার ও সুশাসন
বাংলাদেশ গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে ডিজিটাল টেন্ডার বাধ্যতামূলকসহ নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

অর্থনৈতিক সংস্কার ও অবৈধ সম্পদ ফেরত আনা
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ এ টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছে, তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য। একইসঙ্গে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার, ব্যাংক খাত সংস্কার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রবাসী শ্রমিক ও তরুণদের সুযোগ
দেশের অর্থনীতিতে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদানের প্রশংসা করে ইউনূস নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের পক্ষে যুক্তি দেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, এআই ও সবুজ জ্বালানিতে প্রশিক্ষণের কথা জানান।

জলবায়ু পরিবর্তন
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমায় রাখা এবং প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে নবায়নযোগ্য শক্তি, ম্যানগ্রোভ রক্ষা ও জলাভূমি পুনরুদ্ধারকে প্রাধান্য দেবে বলে জানান।

রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমার সংঘাত
ইউনূস বলেন, আট বছর পরও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নেই। তিনি বিশ্বের দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তহবিল বাড়ানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।

প্যালেস্টাইন ইস্যু
গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞকে তিনি “নির্বিচার গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করেন এবং ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।

নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং নারী বান্ধব বাজেট প্রণয়নকে বেইজিং+৩০ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রতিশ্রুতি হিসেবে ঘোষণা করেন।

শান্তিরক্ষা ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি
বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ধারাবাহিক অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি শান্তিরক্ষাদের নিরাপত্তা ও যথাযথ বাজেট নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বহুপাক্ষিক কূটনীতি জোরদারের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

আঞ্চলিক সহযোগিতা
BIMSTEC, BBIN ও SASEC–এর উন্নয়নের পাশাপাশি সার্ক পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়ে ইউনূস জানান, দক্ষিণ এশিয়ার যৌথ কল্যাণে আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, “তিন শূন্যের পৃথিবী” গড়তে হবে—শূন্য কার্বন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব। তিনি এটিকে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ স্বপ্ন হিসেবে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।

১৩০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন