জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বিতর্কিত ভাষণ: বাংলাদেশের স্পষ্ট ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবাদ

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করলে বিশ্ব কূটনীতি মঞ্চে নজিরবিহীনভাবে বহু মুসলিম ও উন্নয়নশীল দেশ প্রতিবাদস্বরূপ ওয়াক আউট করে।
বারবার গাজা ও ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে নিয়ে আসা দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ জানায়—তাদের মধ্যে ছিল পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিশর, কাতার, সৌদি আরবসহ আরও অনেকে।
অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্পষ্ট। বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ইসরাইলো নেতার বক্তব্য চলাকালে কোনো বাংলাদেশি প্রতিনিধি জাতিসংঘ হালে উপস্থিত থাকবেন না। অর্থাৎ, নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বাংলাদেশ পুরোপুরি সভা বর্জন করে। এটি ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কঠোর প্রতিবাদ।
ফিলিস্তিন সংকটে বাংলাদেশ বরাবরই জোরালো অবস্থান নিয়ে এসেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। সর্বশেষ অধিবেশনে উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি মুসলিম ও উন্নয়নশীল বিশ্বে খুবই দৃঢ় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে—যেখানে কয়েকটি মুসলিম দেশ (মরক্কো, আজারবাইজান) উপস্থিত থাকলেও বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ওয়াক আউট করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, বেলজিয়াম, লুক্সেমবুর্গ এবং মাল্টা—এই দেশগুলোর কূটনীতিকরা বক্তৃতার সময় সভা ত্যাগ করেন। তবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, তুরস্ক, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, চেক রিপাবলিক ও অন্যান্য ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র সভায় উপস্থিত ছিল এবং ওয়াক আউট করেনি।
দক্ষিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, চিলি, এবং ব্রাজিল—এই তিনটি দেশ গুরুত্বপূর্ণভাবে ওয়াক আউটে অংশ নেয় এবং নিজেদের মানবাধিকার ও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থনের বার্তা দেয়।
উত্তর আমেরিকার কোনো দেশই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জাতিসংঘ বক্তৃতার সময় ওয়াক আউট করেনি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো—এই তিনটি দেশই সভাস্থলে ছিল।
আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরিশাস, কমোরোস এবং নাইজার—এই দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বক্তৃতার সময়ে সভা ত্যাগ করে। তবে ইথিওপিয়া, কেনিয়া, ঘানা, এবং মরক্কোর উপস্থিত ছিল।
ওয়াক আউটকারী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, ইরান, কাতার, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, লিবিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, সুদান, এবং এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া,পাকিস্তান, বাংলাদেশ (অনুপস্থিত), তুর্কমেনিস্তান, ব্রুনাই, মালদ্বীপ এবং উপস্থিত ছিল চীন, ভারত, আজারবাইজান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ এবার জাতিসংঘে শান্তি ও মানবাধিকার ইস্যুতে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক বলয়ে দেশে-বিদেশে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল সভা বর্জনের ঘটনাটি গুরুত্ব পেয়েছে এবং দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের এই স্পষ্ট বার্তা—সহিংসতা, অন্যায় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে সবসময়ই আপোষহীন।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের আদর্শিক অবস্থান, বন্ধুপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রগুলোসহ বিশ্বকূটনীতিতে শক্তিশালী ও নীতিনিষ্ঠ সত্তা হিসেবে দেশের গুরুত্ব আবারও প্রমাণিত হলো। এই প্রতিবাদ উদাহরণ হয়ে থাকলো—সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দীর্ঘদিনের বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে আসে না।
১৫৩ বার পড়া হয়েছে