নিউইয়র্কে রাজনৈতিক সফর ও নিরাপত্তা সংকট

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১:৩২ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে JFK বিমানবন্দরে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল গেলে, আগেভাগে সুষ্ঠু নিরাপত্তা ও সমন্বয় নিশ্চিত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের একটি সংগঠিত গোষ্ঠী সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে জাতীয় নেতাদের ওপর হামলা চালায়।
কনসুলেট অফিসের কর্মকর্তারা বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের জানিয়েছিল আগত অতিথিরা ভিন্ন পথে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন—ফলে তারা সরে গেলে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা উপস্থিত থেকে হামলায় জড়িয়ে পড়ে।
পর্যাপ্ত এবং কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব, অতিথিদের দিকে ভুল তথ্য পৌঁছে দেওয়া, এবং পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে অপর্যাপ্ত সমন্বয়—সবকিছু মিলিয়ে নিউইয়র্ক কনসুলেট অফিসের ভূমিকা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মীদের দ্বারা এমন ঘটনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই কনসাল জেনারেল মো. মোজাম্মেল হকের, কারণ অফিসের প্রধান হিসেবে রাজনীতি-নিরপেক্ষ, দায়িত্বশীল এবং সতর্ক প্রশাসন তাঁর দায়িত্ব ছিল।
এর প্রক্ষিতে NCP নেতা আখতার হোসেনের ওপর প্রকাশ্যে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নানা মন্তব্য ও আন্দোলিত ভাষায় অপমান করা হয়। জামায়াতের নেতাদের “রাজাকার” বলেও প্রকাশ্যে গালিগালাজ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সংস্থা ও রাজনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলছে, কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলীয় মনোনীত ব্যক্তিকে কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব দিয়েছে? প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অপ্রয়োজনীয় পক্ষপাত এবং অগ্রহণযোগ্য সমন্বয়হীনতা—এসবে JFK ও নিউইয়র্কে বারবার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিপূর্বে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলা, জাতীয় নেতাদের অপমান, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য নিউইয়র্ক কনসাল অফিস ও কনসাল জেনারেল মো. মোজাম্মেল হকের ভূমিকা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক সফর, নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক সেবার ক্ষেত্রে অতীতের ভুল থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষা নিয়ে, যথাযথ জবাবদিহিতা, প্রশাসনিক সক্ষমতা এবং সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।
নিউইয়র্ক JFK বিমানবন্দরে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের উপর আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সন্ত্রাসী হামলা, NCP নেতা আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ, মির্জা ফখরুল ইসলামকে অপমান এবং জামায়াতের নেতাকে রাজাকার বলে গালিগালাজ—সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় নিউইয়র্ক কনসাল জেনারেল মো. মোজাম্মেল হকের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। কনসুলেট অফিসের অব্যবস্থাপনা ও তথ্য বিভ্রান্তি, স্থানীয় নিরাপত্তা ঘাটতি এবং প্রকৃত নিরাপত্তা সমন্বয় না রাখায় হামলার সুযোগ পাওয়া গেছে।
JFK-তে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধিদলের সফরের সময় কনসুলেট অফিসের যথাযথ নিরাপত্তা ও সমন্বয় ছিল না, ফলে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ভুল তথ্য পেয়ে এলাকা ত্যাগ করেন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা সহজেই জায়গা দখল করে হামলা চালায়। হাজিরকৃত অতিথিদের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অসম্পূর্ণ—কনসুলেট প্রশাসনিকভাবে ব্যর্থ হয়।
মো. মোজাম্মেল হকের দলীয় (আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট) মনোনয়নের কারণে নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাসে সক্রিয় রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ এসেছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনোনয়ন ও ফোনালাপে প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে বারবার বাংলাদেশি কমিউনিটি ও বিদেশি অতিথিরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন; নিউইয়র্কে জাতীয় সফরের সম্মানও নষ্ট হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক কনসাল অফিসের ভূমিকা, সরকারি মনোনয়ন ও কূটনৈতিক শৃঙ্খলা সবই তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য প্রবাসীরা এখন দ্রুত জবাবদিহি, নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং কূটনৈতিক সাহচর্য চাইছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে আরও কঠোর ও সম্প্রসারিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবী।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৪৪ বার পড়া হয়েছে