সর্বশেষ

জাতীয়হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশবাসীকে শান্ত থেকে দোয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
ফেসবুকে ছড়ানো তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই, হাদির অবস্থা সংকটজনক : চিকিৎসক
হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় প্রধান আসামির বাবা–মা গ্রেফতার
নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশীদের নসিহত গ্রহণযোগ্য নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা ইস্যুতে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তলব
বিদেশগমন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও হয়রানি কমেছে: আসিফ নজরুল
অমর একুশে বইমেলা-২০২৬ শুরু হচ্ছে ২০ ফেব্রুয়ারি
সারাদেশগাইবান্ধায় গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে থেকে ৪ ককটেল উদ্ধার
ঈশ্বরদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে বিএনপি নেতা নিহত
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী রেজাউল গ্রেপ্তার
হাদির ওপর হামলায় ‘ব্যবহৃত’ পিস্তলসহ গুলি নরসিংদী থেকে উদ্ধার
আন্তর্জাতিকফিলিস্তিনিসহ ও ৭ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
খেলানিজের সর্বোচ্চ মূল্যে দল পেয়ে আইপিএল নিলামে ইতিহাস গড়লেন মুস্তাফিজ
ফেবু লিখন

ছোট বেলায় দেখা দুর্গাপূজা

মীর মুর্ত্তজা আলী বাবু
মীর মুর্ত্তজা আলী বাবু

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
আর ক'দিন পরেই শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পাকিস্তান আমলে আমরা যখন খুব ছোট, কেবল মাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি দেখতাম এ উৎসবে পুরো কুমারখালী শহর মেতে উঠেছে। স্বাধীনতার পরেও কিছুকাল এ ধারা অব্যাহত থাকতে দেখেছি।

আমরা কুমারখালী শহরের এমন এক অংশে বসবাস করি, যে অংশটিতে একদা হাতে গোনা কয়েকটি মুসলমান পরিবার বসবাস করতো। কালের পরিক্রমায় এখন সেখানে হাতে গোনা কয়েকটি খন্ডিত হিন্দু পরিবারের বসবাস।

আমাদের পাড়াটিকে কুন্ডুপাড়ার একটি অংশ বলেই জানতাম, ভূমি ম্যাপে আমাদের এ'টি কুমারখালী মৌজা হওয়ায় আমরা ঠিকানা লিখি শুধুমাত্র কুমারখালী, কুষ্টিয়া লিখে। একদা এটি ছিলো কুমারখালী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড, পরবর্তীতে ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ওয়ার্ডটি এখন চার নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে পরিচিত। শতাব্দী প্রাচীন গার্লস স্কুল (যেটি বর্তমানে সরকারিকরণকৃত একমাত্র বিদ্যালয়) এ অংশে থাকায় কেউ কেউ গার্লস স্কুল পাড়া আবার এক সময়ে পাড়ায় পাল সম্প্রদায়ের আধিক্য থাকায় পাল পাড়া হিসেবেও গণ্য করতেন। এটি তো গেলো পাড়ার নাম। ধান ভাঙতে শীবের গীতই বা গাইছি কেন?

আমাদের বাড়ির সামনে পালেদের একটা মন্ডব আছে, একদা এখানে সাড়ম্বরে দুর্গাপূজা, রাস পুজা সহ বিভিন্ন পুজা-আর্চনা হতো, বহু বছর হলো ওখানে এখন কিছুই হয় না। মন্ডবটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দুর্গাপূজা হতো তেমাথা খ্যাত মন্ডবে, এখন এ'টি নবগ্রহ মন্দির হিসেবে খ্যাত এবং বড় আকারেই দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানাদি হয়। এক সময়ে এই মন্দিরটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন প্রয়াত সুনীল সাহা। মাথাভাঙ্গা নামে একটি স্থানে দুর্গাপূজা ও চরক মেলার আয়োজন হতো, এটি ছিলো কুমারখালী স্পোর্টিং ক্লাব মাঠের উত্তর পাশে। এখানে আর পূজা পার্বণ হয় না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এই স্থানটি চেনেন না, মাথা ভাঙ্গা নামটিও আর কোথাও উচ্চারিত হয় না। এলঙ্গী পাড়ার (অনেকেই যে!টিকে কলোনী পাড়া বলেন) বীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর (বিরেন বাবু নামে পরিচিত) বাড়ির চৌহদ্দি অর্থাৎ তাঁর বাড়ি সংলগ্ন বাগানে মঞ্চ সাজিয়ে দুর্গাপূজা হতে দেখেছি, উনি মারা যাওয়ার পর তাঁর উত্তরাধিকারেরা বাগান ও বিশাল বাড়িটি বিক্রি করে ভারতে চলে গেলে ওখানে আর পূজা হয় না। কুমারখালী কালীমন্দিরে নিয়মিত পূজা হতো, এখনো হয়। কুন্ডু পাড়া ক্লাব সংলগ্ন স্থানে এবং তেঁতুল ঠাকুরের বাড়ি সংলগ্ন মন্দিরে নিয়মিত পূজা হতো, এখনো হয়। পূজার সময়ে কুমারখালী তেঁতুল ঠাকুরের মন্দিরে পাঁঠাবলি হতেও দেখেছি, এখন হয় কিনা জানি না। এগুলি ছিলো আমাদের হাতের কাছের পূজা মন্ডপ। এছাড়া আমরা বন্ধুরা দল বেঁধে তেবাড়িয়া, বাটিকামারার পঞ্চান্ন বিশ্বাসের বাড়ি এবং আগ্রাকুন্ডুতেও দুর্গাপূজা দেখতে গেছি। কুন্ডু পাড়ার পূজা মন্ডপে দশমীর রাতে অথাবা তার পরের রাতে এলাকার নাট্যকর্মীরা নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করতেন। আমাদের অগ্রজেরা অনেকেই সে সব নাটকে অভিনয় করতেন। ত্রিরত্ন, বৌদির বিয়ে, বিএ পাশ বউ ইত্যাদি নাটক ছোটবেলায় এই নাট্যমঞ্চে আমরা উপভোগ করেছি।

তবে কখনোই আমি কুমারখালীর দুর্গাপুরে কোন দুর্গাপূজা হতে দেখি নি, তা সে ছোট বেলায় হোক আর বড় বেলায়ই হোক। এর অবশ্য কারণ হতে পারে, নাম দুর্গাপুর হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের বসবাস এ এলাকায় ছিলো না বললেই চলে।

ছোটবেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বন্ধুদের সঙ্গে দুর্গাপূজার উৎসবে আমরাও আনন্দ করেছি, দশমীর মেলায় গিয়ে গড়াই নদীতে নৌকা চড়েছি, ঠাকুর ডুবানোর আনন্দেও শরিক হয়েছি। শুধু ছোট বেলায় বলি কেন, সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়, আমরা যখন কলেজে পড়ি তখনও দুর্গাপূজার উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি হিন্দু সম্প্রদায়ের বন্ধুদের সঙ্গে। সন্তোষ সেন আর শিবনাথ কর্মকারের বাড়িতে দুর্গাপূজা ও লক্ষী পুঁজায় নিয়মিত দাওয়াতও খেয়েছি আমরা বন্ধুরা। তখন দুর্গাপূজার সময়ে আমাদের কখনো মনে হয় নি এই সমস্ত উৎসব শুধুমাত্র একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর, মনে হতো এ উৎসব যেনো সবার, সার্বজনীন। বন্ধু চুননু মাঝে মধ্যে বলে, ছোটবেলায় তাঁর বাবাকে কুন্ডুপাড়ার পূজা আয়োজনে একান্ন টাকা পাঁচ পয়সা চাঁদা দিতে দেখেছে। আমিও তেমাথার পূজা আয়োজনের স্নরণিকায় পৃষ্ঠপোষক তালিকায় আমার অগ্রজ প্রয়াত মীর আমজাদ আলীর নাম দেখেছি।
কুমারখালীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিলো তুলনাহীন, বোধকরি এখনো সে'টি আছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করি।

লেখক: কবি ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

১৯৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন