তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করলে সরকারি রিফর্মে মাইলফলক হবে

শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০৪ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি মোকাবিলায় আইন আরও শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি—এ মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, “সরকারের বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। এটি শুধু জনস্বাস্থ্যে নয়, বরং সমাজ ও অর্থনীতিতেও সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম: আইন শক্তিশালীকরণে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)।
স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি তামাক
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, “তামাক ব্যবহারকারীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় খসড়া আইন দ্রুত পাস করতে হবে।”
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অপরিহার্য।”
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক আবু তাহের বলেন, “গণমাধ্যম এ ইস্যুতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আইন বাস্তবায়ন ও সংস্কারে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আরও বেগবান করতে হবে।”
বিএআইআইএসএসের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারে রাজস্ব হ্রাসের আশঙ্কা ভিত্তিহীন। বরং এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তামাক: এসডিজি অর্জনের পথে বড় বাধা
বক্তারা জানান, তামাক বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বড় অন্তরায়। অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার কমাতে হলে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
দেশে প্রতি বছর অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ, যার বড় অংশই তামাকসংশ্লিষ্ট। প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে তামাক ব্যবহারের কারণে।
তরুণদের রক্ষায় প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা—এ কথা জানিয়ে বক্তারা বলেন, “১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি তরুণ জনগোষ্ঠীকে তামাকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় কোম্পানির প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী আইন জরুরি।”
খসড়া সংশোধনীর মূল প্রস্তাব
প্রজ্ঞার উপস্থাপনায় জানানো হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া আইনে যেসব মূল পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে, তা হলো:
পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল
বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ
তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ
খোলা বা খুচরা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ
ই-সিগারেট, ভ্যাপিং এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ
বক্তারা আরও বলেন, এই আইন বাস্তবায়ন হলে তামাকমুক্ত প্রজন্ম গঠনের পথ অনেকটাই প্রশস্ত হবে।
১২০ বার পড়া হয়েছে