সর্বশেষ

সারাদেশ

কক্সবাজারে ইলিশ সংকট: জেলেদের সংসারে মারাত্মক প্রভাব

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার প্রতিনিধি

মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:২০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
কক্সবাজার উপকূলে ইলিশের দেখা মিলছে না। বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন নিম্নচাপ এবং বৃষ্টির অনিয়মিততায় ইলিশ ধরা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

পাশাপাশি, গভীর সাগরে দেশি-বিদেশি ট্রলারে নির্বিচার মাছ শিকারের ফলে ইলিশ আহরণ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। এতে জেলেদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, এমনকি ৭০ শতাংশ জেলে পরিবারে এক বেলা খাবার জোটে না বলে দাবি করা হয়েছে।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাটে রয়েছে শতাধিক ট্রলার। গত শনিবার সেখানে দেখা গেল চার জেলে নুর হাসান, আবু তৈয়ুব মাঝি, মো. শফি ও আবদুল কাইয়ুম মাঝি দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পরও এখন ইলিশের অভাবে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তারা জানান, তিন বছর আগেও ইলিশের বিপুলতা ছিল, যা সংসার চালানোসহ সন্তানদের লেখাপড়ায় কাজে আসতো। কিন্তু এখন সাগরে ইলিশের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে সাম্প্রতিক সময়ে গভীর সমুদ্র থেকে আসা কয়েকটি ট্রলারে মাত্র ৭০ থেকে ১৩০টি ইলিশ ধরা পড়েছে, যা গত দিনের তুলনায় অনেক কম। এসব ইলিশ বাজারে প্রতি কেজি ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সামগ্রিক মাছ শূন্যতার কারণে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে।

গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে বৃষ্টির ধরণ পরিবর্তিত হয়েছে এবং ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। এতে ইলিশের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে। স্থানীয় জেলে মো. শফি জানান, আড়াই বছর আগে তাঁর ট্রলারে সাত দিনের যাত্রায় ২৫ লাখ টাকার ইলিশ ধরেছিল, যা এখন অসম্ভব।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানালেন, জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রলার রয়েছে, কিন্তু ছয় থেকে সাত মাস ধরে মাছ শিকারের ফল ভালো নয়। তিনি ইলিশ সংকটের কারণ অনুসন্ধানে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, জেলে নুর হাসান জানান, গত তিন মাসে ২১ জেলে অন্তত ১০বার সাগরে ট্রলার নিয়ে নেমেও তারা মাত্র ১০০ থেকে ২০০ ইলিশই ধরতে পেরেছেন। জ্বালানি ও খাদ্যের খরচ মেটানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে জেলেদের জীবন ও সংসার দুটোই হুমকির মুখে পড়েছে।

মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের তথ্য মতে, গত কয়েক বছরে ইলিশ আহরণ ধীরে ধীরে কমে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩,৯৭৫ মেট্রিক টন থেকে কমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১,৬২৮ মেট্রিক টনে। চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত বিক্রিত ইলিশ মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন।

মৎস্য বিভাগের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী জানান, ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্বও হ্রাস পেয়েছে। জেলার অন্যান্য মাছ বিক্রির কেন্দ্রগুলোতেও ইলিশের প্রাচুর্য নেই।

তবে, দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ইলিশের সংকট দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈধ ট্রলিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে, কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের অবস্থার অবনতি চলতেই থাকবে।

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন