সবজি ও ডিমের দামে আগুন, ভোগান্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষ

শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫ ৫:০৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে আবারও অস্থিরতা। মাছ-মাংসের দাম দীর্ঘদিন ধরেই বেশি। এখন সেই চাপ গিয়ে পড়েছে ডিম ও সবজির বাজারে, যা স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য একসময় সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে এই দুটি পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে কার্যকর তদারকির অভাব ও ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রাকৃতিক কারণেই সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
সবজির বাজারে হাহাকার
রাজধানীর আগারগাঁও, মহাখালী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০–১৪০ টাকা,
লম্বা বেগুন ৬০–৮০ টাকা,
পটোল, কাঁকরোল, ড্যাঁড়শ ৬০–৮০ টাকা,
চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা ৫০–৭০ টাকা,
বরবটি, করলা ৮০–১০০ টাকা।
টমেটো ১৪০–১৭০ টাকা,
কাঁচামরিচ ২২০–২৬০ টাকা কেজি।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়ার দামও ৬০–৭০ টাকার মধ্যে।
সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমী উৎপাদন কম এবং টানা বৃষ্টির কারণে মাঠে ফসল নষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, “সবজির মৌসুম না থাকায় দাম এমনিতেই বেশি। তার ওপর উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহও কমছে।”
ডিম ও মুরগির দামেও ঊর্ধ্বগতি
সবজির দাম বাড়ার কারণে ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে খুচরা বাজারে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০–১৫০ টাকায়। আগে যা ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। পাড়ার দোকানগুলোতে দাম আরও বেশি।
ব্রয়লার মুরগির কেজি এখন ১৭০–১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০–১৬০ টাকা ছিল। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০–৩২০ টাকায় পৌঁছেছে।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, “দাম পাইকারিতেই বাড়ছে। তবে প্রতিদিন ভোক্তা অধিদপ্তরের লোকজন আসে, তাই অতিরিক্ত দাম নেওয়ার সুযোগ নেই।”
চাল-আটা-ডালেও চাপ
বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও চালের দামে তেমন পরিবর্তন নেই।
সরু চাল কেজি ৭৫–৮০ টাকা,
মাঝারি চাল ৬০–৬৫ টাকা,
মোটা চাল ৫৫–৬০ টাকা।
আটার দামে সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
খোলা আটা ৪৫–৫০ টাকা,
প্যাকেট আটা ৫৫–৬০ টাকা।
দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০–১৫০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল ১৩০ টাকা। আমদানি করা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫–১০৫ টাকায়।
পেঁয়াজ-রসুনে স্থিতিশীলতা
ভারত থেকে আমদানির কারণে পেঁয়াজের দামে আপাতত স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।
দেশি পেঁয়াজ ৮০–৮৫ টাকা,
আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬০–৬৫ টাকা।
রসুনের বাজারে পার্থক্য রয়েছে আমদানি ও দেশি জাতের মধ্যে।
দেশি রসুন ৮০–১২০ টাকা,
আমদানি করা রসুন ১৬০–১৮০ টাকা।
ভোক্তাদের ক্ষোভ ও আশঙ্কা
বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা হামিমুর রহমান বলেন, “সরবরাহ সংকটের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে চলছে। সরকারের নিয়মিত তদারকি না থাকায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ আরও বিপদে পড়বে।”
টিসিবি'র তথ্য অনুযায়ী
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ। গত সপ্তাহেই ডিম, আটা, মুরগি ও ডালের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে