সর্বশেষ

জাতীয়

৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫ ৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
অব্যবস্থাপনা, উচ্চ হারে খেলাপি ঋণ, পুঞ্জীভূত লোকসান ও মূলধন ঘাটতির কারণে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে সরকারের প্রাথমিকভাবে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের সংকট কাটাতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ পাঠায়। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়ায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সম্মতি নিয়ে রেজল্যুশন বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে:
১. পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
২. ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
৩. আভিভা ফাইন্যান্স
৪. এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
৫. ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
৬. বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)
৭. প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
৮. জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি
৯. প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, অবসায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও চাকরিবিধি অনুযায়ী পাওনাদি পরিশোধ করা হবে।

ভয়াবহ আর্থিক চিত্র
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের ৮০-৯৯ শতাংশই খেলাপি। যেমন, এফএএস ফাইন্যান্সের ঋণের ৯৯.৯৩% খেলাপি, লোকসান ১,৭১৯ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১,০১৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, পিপলস লিজিংয়ের লোকসান দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৪,৬২৮ কোটি টাকায়।
সব মিলিয়ে ৯ প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসান ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আইন অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল
২০২৩ সালের প্রণীত ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুযায়ী, আর্থিক অনিয়ম, মূলধন ঘাটতি, আমানতকারীর স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে।
এই আইনের ৭(১) ধারার (ঘ), (ঙ) ও (চ) উপধারার আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে ১৫ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়।

খাতজুড়ে চিত্র
বাংলাদেশে বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যার ৮৩ শতাংশই খেলাপি। বন্ধকি সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ২৬ শতাংশ।
অন্যদিকে, তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা ১৫টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৭.৩১ শতাংশ, এবং তাদের বন্ধকি সম্পদের পরিমাণ মোট ঋণের ৮১ শতাংশের সমান।

আমানতের ঝুঁকি
সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি আমানতের পরিমাণ প্রায় ৫,৭৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৮৯ কোটি টাকার বিপরীতে গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছেন, ফলে নিট ব্যক্তি আমানত ৪,৯৭১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই টাকা ফিরিয়ে দিতে ও প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে অন্তত এ পরিমাণ তহবিল প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন হবে।

 

১৯২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন