সর্বশেষ

মতামত

মেধাবিপ্লবের বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি বিতর্ক ও মেধার সঙ্গে সাংঘর্ষিক

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫ ৫:১৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল— মেধার ভিত্তিতে, ন্যায্য প্রতিযোগিতায় সকলের অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা।

বিশেষ করে সরকারি চাকরি ও উচ্চ-শিক্ষায় মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের লক্ষ্যে দেশের তরুণ সমাজ রক্তাক্ত সংগ্রাম করেছে, জীবন দিয়েছিল হাজারেরও বেশি সাহসী শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন চলমান কোটা সংক্রান্ত বৈষম্য, পছন্দ-অপছন্দ নির্ভর নিয়োগ এবং অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে ৯৩% পদ সরাসরি মেধার ভিত্তিতে পূরণের নীতিমালা গৃহীত হয়।
কিন্তু স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের এই বৃহৎ অর্জনের মাত্র কিছুদিন পর, স্কুলে ভর্তি কার্যক্রমে পুরাতন নিয়মে পুনরায় লটারি নির্ভর পদ্ধতি চালু রাখা দেশের অর্জন ও স্বপ্নের সাথে গভীর সাংঘর্ষিক—এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদরাসহ সচেতন সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বিপ্লবে মেধা ছিল আন্দোলনের হৃদয়
২০২৪ সালের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান কোনো দলীয় অনুসঙ্গ ছিল না; এটি ছিল সাধারণ ছাত্র-জনতার—বৈষম্যহীন, স্বাধীন, প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থার দাবি। আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি, নিয়োগ ও ভর্তি—সব ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন ও স্বচ্ছতা ছিল প্রধান স্লোগান।
করোনা মহামারির সংকটে পরিস্থিতির চাপে পরীক্ষামূলকভাবে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রমে চালু হওয়া ডিজিটাল লটারি পদ্ধতি এখনো দিব্যি বহাল, স্বাভাবিক সময়েও। এবার এখানেই প্রশ্ন? এই লটারি পদ্ধতিতে কি ২০২৪ বিপ্লবের মূল ‘স্পিরিট’ অব্যাহত থাকছে? গণতন্ত্র ও মেধা মূল্যায়নের নবজাগরণে এই সময়ে লটারি পদ্ধতি দেশের আন্দোলনের স্পিরিট ও তরুণদের আত্মত্যাগের সম্পূর্ণ স্বার্থবিরোধী।

লটারি পদ্ধতি: গণতান্ত্রিক চেতনা ও মেধার অগ্রযাত্রার সঙ্গে অসঙ্গত
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধবিরোধী: অংশগ্রহণমূলক, উদ্যমী, উদ্ভাবনী শক্তি ও দেশের ভবিষ্যত নেতা সৃষ্টির জন্য প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। পরীক্ষাবিহীন ভর্তিতে কোমলমতি ছেলেমেয়েরা ইচ্ছা, পরিশ্রম, অধ্যবসায়—সবকিছু অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
মেধার চরম বঞ্চনা: গতবছর যাদের স্কুল জীবন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও মনোযোগের শিখরে ছিল, তাদের জন্য বর্তমানে ভাগ্যনির্ভর লটারির দুঃখজনক পরিণতি।
বিপ্লবের স্পিরিটের প্রতিকূলতা: এই বাংলাদেশ যেখানকার তরুণরা ‘মেধার আরাধনায়’ বুকের রক্ত দিয়েছে, সেখানে মেধাবীর সুযোগ নিতে ‘লটারি’র মতো যান্ত্রিক পদ্ধতি চলতে দেওয়া বিপ্লব ও আত্মোৎসর্গের প্রতি অবিচার।

বিপ্লবের দাবি—মেধাভিত্তিক স্বচ্ছ ভর্তি
গণতান্ত্রিক, স্বনির্ভর, আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে, অগ্রসর জাতি গঠনে, শুধু সরকারি চাকরি নয়—ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি কিংবা কোনো স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মেধা, ন্যায্য পরীক্ষা, ও আস্থা রক্ষাই একমাত্র যুক্তিযুক্ত পন্থা—এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ভাগ‍্য নির্ধারণ
আজ যে শিশুটি ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তির জন‍্য স্কুল নির্বাচন করে ভবিষ‍্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। যখন সে লটারীর মাধ্যমে কৃতকার্য হতে পারে না। তখন এই শিশু মনে যে মানসিক অবস্থা সৃষ্টি হবে, তা শিশুটি সারাজীবন হতে বেড়াবে। প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া আর লটারীতে ভাগ্যহত হওয়া কখনোই এক হতে পারে না। এই কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে লাটারীর খেলা বন্ধ না করা হলে, বিপ্লবের আত্মদানকৃত ৩২ শিশুর আত্মা কখনোই শান্তি পেতে পারে না।

পরিশেষ
মাধ্যমিক পর্যায়ে লটারি পদ্ধতি ছিল জরুরি সময়ে বিশেষভিত্তিক পদক্ষেপ। কিন্তু আজ, ২০২৪-এ অর্জিত মেধার জয়—বাঙালির স্বপ্নপূরণের পূর্বশর্ত। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিভ্রান্তিকর, ন্যায্যতাবিরোধী লটারি ভর্তি সম্পূর্ণ বিপ্লব-স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক—অতএব জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা কেন্দ্রিক, স্বচ্ছ প্রশংসাপত্রে ভর্তি ফিরিয়ে আনাই সময়ের দাবি।
শিক্ষার মূল ভিত্তি—পারিপার্শ্বিকতা, ন্যায্যতা আর মেধা। সেটির বিপরীতে লটারি নয়, কাঙ্ক্ষিত পথের জয়ী হোক—এটাই গণঅভ্যুত্থানের অন্তরশক্তি।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

১৪৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন