ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের, জবাবে দিল্লির কড়া অবস্থান

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫ ৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির কারণে ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে এই হুমকির তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভারত বলেছে, রুশ তেল আমদানি কোনো অন্যায় নয়—বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত।
সোমবার (৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি ভারতের জন্য কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রচলিত তেল সরবরাহকারীরা ইউরোপমুখী হওয়ায় ভারত বাধ্য হয় সাশ্রয়ী মূল্যের তেলের দিকে ঝুঁকতে। তৎকালীন সময়ে আমেরিকাও এই সিদ্ধান্তে ভারতকে উৎসাহিত করেছিল।”
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, “ভারত শুধু রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তেলই কিনছে না, বরং সেই তেল আবার উচ্চমূল্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে মানুষ মারা যাচ্ছে, আর ভারত সেটা উপেক্ষা করছে।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “এই কারণে ভারতের ওপর আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।”
"একচেটিয়া দায় চাপানো অযৌক্তিক" — ভারত
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, রাশিয়ার সঙ্গে শুধু ভারত নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক পশ্চিমা দেশও এখনো বিস্তৃত বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “২০২৪ সালে ইইউ ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৫ বিলিয়ন ইউরো। ইউরোপ ২০২৪ সালে ১৬.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করেছে, যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।”
ভারত প্রশ্ন তোলে, “যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম, সারসহ নানা রাসায়নিক আমদানি করছে। অথচ একমাত্র ভারতকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এটা দ্বৈত নীতিরই প্রকাশ।”
"ভারত জাতীয় স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে"
দিল্লি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বাস্তবতা বিবেচনা করে এবং দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, “ভারত একটি দায়িত্বশীল অর্থনীতি হিসেবে বিশ্ববাজারে কাজ করে। কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে আমাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
শুল্কের পাশাপাশি ‘জরিমানার’ হুমকিও
এর আগেও ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। সেইসঙ্গে একটি ‘অনির্দিষ্ট জরিমানার’ কথাও বলেন, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ভারতের দুই সরকারি সূত্র জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না দিল্লি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত সম্পর্কের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় উভয় দেশকেই কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে হবে।
১১১ বার পড়া হয়েছে