জুলাই ঘোষণাপত্র ও ট্রেনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনছে সরকার

রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫ ৩:১৮ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনার জন্য সরকার আট জোড়া ট্রেন ভাড়া করেছে, যা ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে।
ট্রেনগুলো বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্র-জনতাকে আগামী ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুরের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কর্মসূচি শেষে এসব ট্রেনের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মোট ভাড়া ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, যা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পরিশোধ করা হবে। রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ৫ আগস্ট দুপুরে এই ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজন করা হবে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণাপত্র পাঠ করতে পারেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত থাকবেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই ট্রেন ভাড়া করার জন্য রেলওয়ে অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর, দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করে আটটি বিশেষ ট্রেনের। এই ট্রেনগুলোর জন্য ভাড়া প্রদান করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ট্রেনগুলোতে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আসার জন্য নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সকাল ৪টার থেকে ৬টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ফিরতি যাত্রা শুরু হবে রাত ৮-৯টার মধ্যে।
বিশেষ ট্রেনের মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রাম থেকে আসা ১৬ কোচের ট্রেন, যেখানে আসনসংখ্যা ৮৯২। এর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে আরেকটি ট্রেন চলবে, এতে ৭৩৬ জন যাত্রী বসতে পারবেন এবং ভাড়া ধরা হয়েছে সাড়ে ৭২ হাজার টাকা। নারায়ণগঞ্জ থেকে ১০ কোচের ট্রেনের আসনসংখ্যা ৫১০, ভাড়া সাড়ে ৫৬ হাজার টাকা। নরসিংদী থেকে ১২ কোচের ট্রেনের আসনসংখ্যা ৬৫২, ভাড়া প্রায় ৯৫ হাজার টাকা। সিলেট থেকে ১১ কোচের ট্রেনের আসন সংখ্যা ৫৪৮, ভাড়া ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। রাজশাহী থেকে ৭ কোচের ট্রেনের আসন ৫৪৮, ভাড়া ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। রংপুর থেকে ১৪ কোচের ট্রেনের আসন ৬৩৮, ভাড়া প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি। ফরিদপুরের ভাঙা থেকে ৭ কোচের ট্রেনের ভাড়া প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
তবে, এই ট্রেনগুলো পরিচালনার জন্য রেলওয়ে একটি সূচি তৈরি করেছে। এর মধ্যে রংপুরের ট্রেনটি ৪ আগস্ট রাত ১১:৩০টায় যাত্রা শুরু করবে, এবং অন্যান্য দূরের গন্তব্যের ট্রেনগুলো ৫ আগস্ট ভোরে ছাড়বে। কাছাকাছি জেলা থেকে ট্রেনগুলো দুপুরের আগে ছাড়বে। কর্মসূচির শেষে দূরের গন্তব্যের ট্রেনগুলো আগে ফিরে যাবে, তারপর কাছাকাছি গন্তব্যের ট্রেনগুলো ছাড়বে।
অতীতে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশ ও কর্মসূচির জন্য ট্রেন ভাড়া করত। ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলও বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য ট্রেন ভাড়া করে। যেমন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ছাত্রদল শাহবাগে ছাত্র সমাবেশের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ২০ কোচের ট্রেন ভাড়া করে। এর আগে, জামায়াতে ইসলামী ১৯ জুলাই তার সমাবেশের জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চারটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে, যার খরচ প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
সামাজিক মাধ্যমে এই ট্রেন ভাড়া নিয়ে সমালোচনা হলেও, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৃহৎ কর্মসূচির জন্য এই ধরনের বিশেষ ট্রেন পরিচালনা স্বাভাবিক নিয়মের অংশ। তারা বলেছে, এই ধরনের ট্রেন পরিচালনায় অন্তত ৩০% বেশি ভাড়া আদায় হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক দলের আবেদনের ভিত্তিতে ট্রেন ভাড়া দেওয়া হয়। আমরা টাকা পাচ্ছি, তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এভাবেই, রাজনৈতিক অঙ্গনে ট্রেন ভাড়ার মাধ্যমে জনসমাগম ও কর্মসূচি পরিচালনার প্রথাটি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে, যা নানা বিতর্কের জন্ম দেয়।
১১২ বার পড়া হয়েছে