আইন-আদালত

জুলাইয়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলি: সাবেক আইজিপির চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলন দমন, গুম, নির্যাতন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পেছনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে—এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দিতে।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি জানান, হেলিকপ্টার থেকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো, ‘ব্লক রেইড’ এবং র‍্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানের নির্দেশ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাস্তবায়িত হয়।

প্রতিদিন রাতের বৈঠকে আন্দোলন দমনের ছক
সাবেক আইজিপি বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রতিদিন রাত ৮-৯টার দিকে কোর কমিটির বৈঠক হতো। বৈঠকে সরকারের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থা ও বাহিনীপ্রধানরা উপস্থিত থাকতেন। আন্দোলন দমনের বিভিন্ন কৌশল, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পরিকল্পনা এখান থেকেই নির্ধারিত হতো।

তিনি দাবি করেন, ওই বৈঠকে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের গোপনে আটক, মানসিক নির্যাতন এবং টেলিভিশনে জোরপূর্বক বিবৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়।

হেলিকপ্টার হামলা ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, “আন্দোলন দমন করতে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের পরিকল্পনা র‍্যাবের তৎকালীন ডিজি হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়। আমি এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না।”

তিনি আরও বলেন, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীতে পৌঁছে দেন।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ছাত্রলীগের উসকানি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করেনি। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ওবায়দুল কাদের ও জাহাঙ্গীর কবির নানক সরাসরি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নির্দেশনা দেন।

সরকার পতনের আগের রাতের বৈঠক
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, সরকার পতনের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুবার বৈঠক হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন মামুন। সকালে এক বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান ও নিরাপত্তা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও রাতে আরেক গোপন বৈঠকে শেখ রেহানা, র‍্যাব ও ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পরদিন (৫ আগস্ট) ফোর্স মোতায়েন ও জনস্রোত ঠেকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

সেনাবাহিনীর ‘নীরব অবস্থান’ ও সরকারের পতন
৫ আগস্ট উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী থেকে লাখো মানুষ রাজধানীমুখী হলে সেনাবাহিনী বাধা দেয়নি বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মামুন। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর মাঠপর্যায়ের অফিসাররা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন। দুপুরে বুঝে যাই, সরকার টিকবে না।”

২০১৮ সালের 'রাতের ভোট' ও পদকের বিনিময়ে সহযোগিতা
জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বিস্ফোরক তথ্য দেন মামুন। তিনি দাবি করেন, তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী প্রধানমন্ত্রীকে রাতে ব্যালট বাক্স পূরণের পরামর্শ দেন। মাঠপর্যায়ের পুলিশ ও প্রশাসন এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। পরবর্তীতে এই 'সহযোগীদের' পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।

র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে টিএফআই সেলে গোপন বন্দিশালা এবং গুম-নির্যাতনের বিষয়টিকে “র‍্যাবের সংস্কৃতি” হিসেবে বর্ণনা করেন মামুন। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কিংবা তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কাছ থেকে আসত।

পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দির শেষ অংশে মামুন বলেন, “সরকারের নির্দেশে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে বহু নিরপরাধ মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত এবং জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

২০৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আইন-আদালত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন