জলাবদ্ধতায় নষ্ট মাঠের পর মাঠ সবজি, বিপাকে কৃষকরা

বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ ৫:০০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেড় মাস ধরে টানা বৃষ্টিতে যশোরে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে জেলার হাজার হাজার হেক্টর সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যেসব জায়গায় পানি সরে গেছে, সেখানেও পচন, ফুল ও ফল ঝরে পড়া, গাছ শুকিয়ে যাওয়া—সব মিলিয়ে চাষিরা পড়েছেন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে। কেউ কেউ বলছেন, এ মৌসুমে তাঁদের সব পরিশ্রম একেবারেই বৃথা গেছে।
যশোরের কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি খরিপ-২ মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। সদর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখানকার মাঠে পটল, বেগুন, ঢেঁড়শ, করলা, লালশাক, কাঁচা মরিচসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে এসব ফসলে ব্যাপক পচন ধরেছে।
রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি, ফলন বিপর্যয়
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, গত জুন মাসে যশোরে ২৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও জুলাই মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮০০ মিলিমিটার। এই অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসলি জমিতে পানি জমে থাকায় সবজি গাছ মরে যাচ্ছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থা।
চাষিদের দুর্দশার চিত্র
চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ক্ষতির মুখে পড়ছি। এবার বৃষ্টির কারণে আমার পটল, বেগুন, শাক—সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে।’
সাতমাইলের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ‘৬ বিঘা জমির সবজি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’
মুরাদগড়ের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১০ কাটা জমির ঢেঁড়স গাছ টিকিয়ে রাখার জন্য ট্রিটমেন্ট করেও মাত্র ৪ কেজি উৎপাদন হয়েছে।’
অন্যদিকে, আব্দুলপুর গ্রামের সাখাওয়াত আলী বলেন, ‘ফলন থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি, জমির লিজের টাকাও তুলতে পারছি না। নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম।’
এলাকার অনেকেই জানান, মাঠে যে আগাম শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার চারা অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে।
চাষিদের ক্ষতির হিসাব, কৃষি বিভাগের দাবি
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) সমরেণ বিশ্বাস বলেন, ‘১৩ হাজার হেক্টরের মধ্যে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। ৬৮১ হেক্টর জমির ফসল جزভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি, যাতে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়।’
তবে চাষিদের অভিযোগ, মাঠপর্যায়ে বাস্তব সহায়তা তারা খুব একটা পাচ্ছেন না। তাঁদের মতে, এ ক্ষতির প্রভাব পড়বে বাজারেও। সবজির দাম বাড়বে, এতে ভোক্তারাও বিপাকে পড়বে।
১৩১ বার পড়া হয়েছে