ডাকাতের কবলে মন্ত্রী

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫ ২:২৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মোস্তফা জামাল হায়দার কে বর্তমানে মিডিয়াতে আলোচিত হতে দেখে ঘটনাটি মনে পড়লো। কয়েকদিন আগে ঐকমত্য কমিশনের মিটিং থেকে বের হয়ে প্রেসের সামনে মোস্তফা জামাল হায়দার বললেন আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ জানাবেন।
অবশ্য পরবর্তীকালে প্রেস উইং থেকে বলা হয় এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।
যাই হোক ওটা আমার আপাতত বিষয়।
তখন এরশাদ সাহেবের সরকার। আমি দিনাজপুরের এনডিসি। মোস্তফা জামাল হায়দার তখন সরকারের পূর্তমন্ত্রী। এখন যেটি গৃহায়ন নামে পরিচিত। মোস্তফা জামাল হায়দার মূলত বামধারার রাজনীতিবিদ ছিলেন। এককালে পূর্ব পাকিস্তানের অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
পরে উনারা ভাসানী ন্যাপে ছিলেন। এই গ্রুপের কাজী জাফর, সিরাজুল হোসেন খান এবং মোস্তফা জামাল হায়দার এরশাদ সরকারে যোগদান করেন।
অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরীর আপন মামা মোস্তফা জামাল হায়দার। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির এক টুকরোর সভাপতি।
দুই মন্ত্রী দিনাজপুরে সফরসুচী পাঠালেন। একজন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ওরফে ইদু চৌধুরী এবং অন্যজন মোস্তফা জামাল হায়দার।
নির্ধারিত দিনে ও সময়ে আমরা সবাই সার্কিট হাউজে উনাদেরকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করছি। বিলম্ব দেখে সবাই উসখুস করছেন। এখনকার মত মোবাইলের যুগ ছিল না তখন। পুলিশ ওয়ারলেসের যতটুকু জানা যাচ্ছিল তা হলো মন্ত্রীদ্বয় চিরির বন্দর পর্যন্ত এসে গেছেন। কিন্তু তারপর আর কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
আমার ডিসি সাখাওয়াত স্যার আমাকে নির্দেশ দিলেন আপনি একটা গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যেয়ে দেখুন।
সে অনুযায়ী আমি এগোতে থাকলাম। রাত এগারোটার মত হবে। নিঝুম অন্ধকার রাত। রাস্তাঘাট ফাঁকা। দশ মাইল হয়ে তাড়াতাড়িই চিরির বন্দরের দিকে পৌঁছে গেলাম। দুই একটা গাড়ি ঘোড়া চলাচল করছে। আর কিছু ঠাহর করতে পারছি না। চোখ কান খোলা রেখে চারিদিকে এগোচ্ছি।
হাই রোডের পাশেই জলাশয় এর দিকে তাকাতেই আমার চোখ আটকে গেল। জলাশয়ের মধ্যে একটি পতাকা ওয়ালা গাড়ি। বুঝতে পারলাম এটাই মন্ত্রীদের গাড়ি। কিন্তু উনারা কোথায়। একটু পরেই দেখি রাস্তায় উনারা দাঁড়িয়ে। মনে হলো তখনও আতঙ্কগ্রস্ত।হাই রোডে ডাকাতের কবলে পড়ে উনারা কোনরকমে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন এবং ড্রাইভার পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। প্রোটেকশনের গাড়িটি ডাকাত দলের ফলো করে এদিক ওদিক চলে গেছে।
আমি তখন মন্ত্রীদের কে বললাম আপনারা আমার এই গাড়িতেই দুইজন চড়ে বসুন। ওই গাড়িতেই আমরা যখন দিনাজপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছলাম, তখন জেলা প্রশাসক কিংবা ওখানে উপস্থিত অন্য কেউ বুঝে উঠতে পারেননি যে আমি মন্ত্রীদের নিয়ে এসেছি। তাই রিসিভ করতে কেউ গাড়ির কাছে এগিয়ে আসেননি।
গাড়ি থেকে বের হয়ে আমি সংবাদ দিলাম মন্ত্রী মহোদয়গণ এসে গেছেন। অবশেষে সবাই এলেন। মন্ত্রী দুইজনের কাছ থেকেই ডাকাতির ঘটনার বিবরণী জানা হলো।
দিনাজপুরের স্থানীয় একটি দৈনিকে হেডিং হয়েছিল,
ডাকাত কবলিত গাড়িতে পতাকাটি তখনও উড়ছিল। ওরা সেটার ছবিও ছেপে দেন।
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ওরফে ইদু চৌধুরী আর বেঁচে নেই। তিনি তখন ছিলেন মহিলা ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী। তার আরেক পরিচয় ছিল হাজী দানেশ এর জামাতা।
খুব সাদাসিধে স্বভাবের মানুষ। উনার সঙ্গে অনেক মেলামেশা করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
লেখক: কাজী আখতার হোসেন, সাবেক সচিব
(লেখাটি তাঁর ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
১৪০ বার পড়া হয়েছে