‘৩৬ জুলাই’ প্রকল্পে ব্যয়ের নামে বিপুল অনিয়ম, উঠছে দুর্নীতির অভিযোগ

রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫ ৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শহীদ ও আহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য নির্মিতব্য ‘৩৬ জুলাই’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পে ব্যয়ের নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রকল্পটির বিভিন্ন উপাদানে প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ দেখানো হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
প্রকল্প ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেখানে একটি আরসিসি পিলারের বাজারমূল্য প্রায় ৯০০ টাকা, সেখানে প্রকল্পে তা ৪০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। একইভাবে, ২৫ লাখ টাকার লিফটের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯২ লাখ টাকা, ১২ লাখ টাকার সাবস্টেশনের মূল্য ধরা হয়েছে ৬৩ লাখ টাকা এবং ৯৫ হাজার টাকার পানির পাম্পের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪ লাখ টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব হিসাব প্রকল্পে ‘পুকুরচুরি’র সুস্পষ্ট প্রমাণ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ থেকে শুরু করে বেড লিফট, সাবস্টেশন ও পানির পাম্প—প্রতিটি ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪৫ গুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ধরনের অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব নিয়েই আজ একনেক সভায় উপস্থাপিত হয়েছে প্রকল্পটি।
৭৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ শতাধিক ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শুরু হলেও বর্তমানে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, সময়সীমার চাপের কারণে ভুল হয়েছে। কিন্তু নিয়মিত যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই ধরনের ব্যয় অনুমোদন কিভাবে হলো, সে বিষয়ে কেউই স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
এদিকে, পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটির নানা অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। সভায় জানানো হয়, এখনো পর্যন্ত প্রকল্পটির কোনো মাস্টারপ্ল্যান, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কিংবা কারিগরি নকশা প্রণয়ন করা হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিটি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত গাইডলাইন, অর্জনের লক্ষ্য এবং সুবিধাভোগীদের তথ্য থাকা আবশ্যক। কিন্তু এই প্রকল্পে এসব কিছুই অনুপস্থিত।”
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রকল্প অনুমোদনের আগে পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন, বরাদ্দের বিস্তারিত বিবরণ এবং একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা জরুরি ছিল। এসব ছাড়া প্রকল্প নেয়া অনভিপ্রেত।”
তবে নানা অসঙ্গতি সত্ত্বেও প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের পথে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রস্তাবিত ডিপিপির (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) ভিত্তিতে প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদিত হতে যাচ্ছে।”
জনগণের করের টাকায় নির্মিত এই প্রকল্পে এমন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সবাই।
১৬২ বার পড়া হয়েছে