থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘর্ষ : ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে আলোচনায় রাজি দুই দেশ

রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫ ৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষে নিহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই হঠাৎ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সরব হন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্কটল্যান্ড সফরকালীন দুই দেশের নেতার সঙ্গে ফোনালাপে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন—“যুদ্ধ বন্ধ না হলে, বাণিজ্য বন্ধ।”
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর থাই ও কম্বোডিয়ান সরকার শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। কয়েক দশকের পুরনো সীমান্ত বিরোধ এবং ঐতিহাসিক প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির ঘিরে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার মধ্যেও আলোচনার এ উদ্যোগে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ট্রাম্প জানান, তিনি সরাসরি উভয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—“সংঘর্ষ চললে যুক্তরাষ্ট্র আর বাণিজ্য করবে না।” এরপরই দুই পক্ষ আলোচনায় আগ্রহ দেখায়।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তবে কম্বোডিয়ার দিক থেকেও আন্তরিকতা দেখতে চাই।”
অবশ্য এখনও দুই দেশের শান্তি বৈঠক কবে ও কোথায় হবে, তা স্পষ্ট নয়। হোয়াইট হাউস, থাই বা কম্বোডিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
এদিকে, সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে। শনিবারও থাইল্যান্ডের ত্রাট এবং কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে নতুন করে গোলাগুলি হয়েছে। আগের সংঘর্ষস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে নতুন এ হামলা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুই দেশই একে অপরকে দোষারোপ করছে। থাইল্যান্ড জানায়, মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সৈন্যের মৃত্যুর পর থেকেই উত্তেজনা বাড়ে। এখন পর্যন্ত তাদের ৭ সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ১৩ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৫ জন সেনা।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সংঘর্ষকে ‘অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি’ বলে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, আসিয়ান গোষ্ঠীর বর্তমান চেয়ারম্যান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক পৃথক শান্তি প্রস্তাব দেন। কম্বোডিয়া প্রস্তাবটি সমর্থন করলেও থাইল্যান্ড এখনো কেবল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে বহু বছর ধরে বিরোধ চলছে। ১১শ শতাব্দীর প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির কেন্দ্র করে এই বিরোধ আরও তীব্র হয়। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মন্দিরটি কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে চিহ্নিত হলেও, ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় ফের সংঘর্ষ শুরু হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কম্বোডিয়া আবারও আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তবে থাইল্যান্ড বলছে, এ সমস্যা কূটনৈতিকভাবে, দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে উভয় দেশের সঙ্গে আলাদা বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করতে চান তিনি। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, শান্তি প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাণিজ্যকে চাপ হিসেবে ব্যবহার করলে আঞ্চলিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
১২১ বার পড়া হয়েছে