অধিকার’ সংগঠনের প্রতিবেদন
তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় নিহত ৭২, গণপিটুনিতে ১৯ জনের মৃত্যু

শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫ ৭:১৪ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সাম্প্রতিক তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সহিংসতাসংক্রান্ত ঘটনা বেড়েছে বলে ‘অধিকার’ মানবাধিকার সংস্থার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলমান সহিংসতা, গণপিটুনি এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখ করে এই রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ৭২ জন নিহত ও প্রায় ১,৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই তিন মাসে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণে এসেছে। বিএনপির মধ্যে ১০৫টি সংঘাতের ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ২ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। তবে, এই সংঘাতের বাইরে আরও বেশ কিছু সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যৌথ বাহিনী গঠন হলেও, এ সময়েও সংস্থাগুলোর সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এসেছে। এই তিন মাসে অন্তত আটজনের উপর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যাদের মধ্যে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।
অপরদিকে, গণপিটুনি ও জনতা দখল করে নেওয়া সহিংসতার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশৃঙ্খলা রোধে পুলিশের সক্ষমতার অভাবের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত তিন মাসে গণপিটুনিতে ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
কারাগার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সব কারাগারেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি রয়েছে। চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি কয়েদি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বন্দীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, ফলে অনেকের মৃত্যু ঘটে। গত তিন মাসে কারাগারে মারা গেছেন ২২ কয়েদি, তাদের মধ্যে অধিকাংশই অসুস্থতার কারণে।
নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই তিন মাসে ২০৮ নারী ও শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ নারী, ১০৯ কন্যাশিশু ও ২১ জনের বয়স জানা যায়নি। কন্যাশিশুদের মধ্যে ১৩ জন দলবদ্ধভাবে ধর্ষিত হয়েছে, এবং তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এছাড়া, যৌন হয়রানি ও নারী হত্যার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে। যৌতুকের কারণে ১১ নারী নির্মমভাবে হত্যা হয়েছেন।
সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের দমন-পীড়নের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন জানায়, গত তিন মাসে ভারতের গুলিতে ৯ বাংলাদেশি নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭ জন গুলি করে ও ২ জন নির্যাতনের মাধ্যমে মারা গেছেন। পাশাপাশি, জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ১,৭৮৩ জন নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের দিকেও নজর দিয়েছে ‘অধিকার’। এই সময়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩০ জন আহত, ১৬ জন লাঞ্ছিত ও ১১ জন হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী, প্রশাসন ও মাদক ব্যবসায়ীরাও হামলার শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সংগঠনের এই রিপোর্টটি দেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির এক চিত্র তুলে ধরে, যেখানে রাজনৈতিক সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে